পাহাড় কাটা বন্ধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে

গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার

| মঙ্গলবার , ১১ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত ‘শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র ২৬টি সভা হয়েছে। সভাগুলোতে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে নানা সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। গত ৯ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “চট্টগ্রামে গত দুই যুগে পাহাড় ধসে প্রতি বছর গড়ে ১১ জন মারা গেছে। অথচ মনুষ্য সৃষ্ট কারণে পাহাড় ধস ও প্রাণহানি এড়াতে দীর্ঘ এ সময়ে নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত ‘শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’। এর অন্যতম ছিল পাহাড় কাটা বন্ধ করা। এ পর্যন্ত কমিটি ২৬টি সভা করেও পাহাড় কাটা বন্ধ করতে পারেনি। ফলে থামছে না পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড় কাটার কৌশল হিসেবে ছোট ছোট বসতি স্থাপনের মাধ্যমে প্রথমে পাহাড় দখল করা হয়। এরপর পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয় বসতি। পরে সুবিধাজনক অংশে এবং পাহাড়ের বিভিন্ন বসতির অন্তরালে বিরামহীনভাবে চলে পাহাড় কাটা। একসময় সেই অংশে পাহাড় কাটা শেষ হলে বসতি অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও ভিন্ন পদ্ধতিতেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। নির্দিষ্ট পাহাড় কাটার পূর্বে প্রথমে এর কিছু অংশে ৯০ ডিগ্রি খাড়াভাবে কাটা হয়। তারপর যেসব পাহাড় খাড়াভাবে কাটা হয়েছে তার চূড়ায় কিছু দূর অন্তর অন্তর খালের মতো করে কেটে ফেলা হয়, যাতে বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের মাটি সহজেই ধসে পড়ে।”

আসলে চট্টগ্রামে প্রতিবছর কোনো না কোনো জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘটে প্রাণহানি। গত ১৩ বছরে পাহাড় ধসে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। টানা ভারী বৃষ্টিতেও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। তাদের সরানো হয় শুধু বর্ষা মৌসুমে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি স্থায়ী কোনও সমাধান না হয় তাহলে প্রাণহানি আরও বাড়বে। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদেরকে সেখানে বসবাসের সুযোগ করে দিচ্ছে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরিকল্পিত নগরীতে কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি পরিকল্পনা থাকতো তাহলে তাদের কোথাও স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া যেত।

পাহাড়ধস বন্ধে বেশ কিছু পাহাড় সংরক্ষণ করে দেখা যেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, পাহাড়গুলো আমাদের সম্পদ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায় না! ধারাবাহিকভাবে পাহাড়ের ক্ষতি করে চললে পাহাড়ও একসময় তার প্রতিশোধ নেবে। পাহাড়কে নিজেদের স্বার্থে কোনো গোষ্ঠী বা চক্র যেন ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।

চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচলিত যেসব আইন আছে সেসব আইনে যে শাস্তির বিধান বর্ণিত আছে তা আরও বৃদ্ধি করে এর সুপ্রয়োগ জোরদার করতে হবে। পাহাড় দখলবারীদের উচ্ছেদ করতে হলে যতটুকু জনবল বন বিভাগের থাকা উচিত সেসব বৃদ্ধিতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। জলবায়ুু পরিবর্তানের বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড় ও গাছ কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্ষায় কোনো না কোনো সময় ভারি বর্ষণ হবেই। তবে তার সঙ্গে পাহাড় কাটা, বনের গাছপালা কেটে ফেলার ঘটনা যোগ হলেই এর খেসারত চরমভাবে দিতে হবে আমাদের।

পাহাড়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও পাহাড় কাটা রোধ করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। পাহাড় ধ্বংসের কুফল সবাইকে বোঝাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ি বন ধ্বংসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ে পুনরায় প্রকৃত পাহাড়ি বনায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। ‘শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি’র কার্যক্রম সভার মধ্যে যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে