পাহাড়ে ৩০০ গার্লস ক্লাবের ১২ হাজার কিশোরীকে নিয়ে প্রকল্প

লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণ ও প্রজনন স্বাস্থ্য

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক জ্ঞানই পারে আলোকিত মা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে। এজন্য স্কুল পর্যায়ে এ বিষয়ে আরো সচেতনতা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর মোটেল সৈকতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় এ সুপারিশ করা হয়। ‘আওয়ার লাইভস, আওয়ার হেলথ, আওয়ার ফিউচার’ প্রকল্পের বিভাগীয় পর্যায়ের অংশীজনদের নিয়ে এই সভা হয়।
কিশোরী ও যুব নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে তিন পার্বত্য জেলার ১৭টি উপজেলায় ৩০০টি গার্লস ক্লাবের ১২ হাজার কিশোরী ও যুব নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের কাজ চলছে। সভায় রাঙামাটির গার্লস ক্লাব সদস্য বিশাখা ত্রিপুরা বলেন, এ পর্যন্ত ১৯টি সেশনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমরা স্যানিটারি প্যাড বানানো শিখেছি। ফলে প্যাডের ব্যবহার বেড়েছে। আগে মাসিকের সময়ে মানসিক চিন্তায় ভুগতাম। যার প্রভাব শরীরে পড়ত। এই সময়ে মানসিক অবস্থা কীভাবে স্বাভাবিক রাখতে হয় তা আমরা শিখছি। এ বিষয়ে আলোচনায় ভয়-জড়তা ছিল। যা অনেকটাই কেটেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং সিমাভি নেদারল্যান্ডসের কারিগরি সহযোগিতায় তিন পার্বত্য জেলার ১০টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এ প্রকল্পে বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
খাগড়াছড়ির প্রকল্প বাস্তবায়ন সহযোগী তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শুরুতে সামাজিক ট্যাবুর কারণে এসব বিষয়ে উচ্চারণও করা যেত না। ট্যাবুর কারণে মাসিকের সময় কিশোরীরা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। ফলে কিশোরীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। ১২ হাজার কিশোরী ও যুবা নারীকে নিয়ে এই কাজ পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় প্রভাব ফেলবে। শুধু কিশোরীদের নয় তাদের মা-বাবা-ভাই এবং স্থানীয় প্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই কিশোরীরাই একদিন আলোকিত মা হবেন। আলোকিত মা পেলেই পাব আলোকিত জাতি।
সভার প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা ও নারীর অধিকার বিষয়ক সঠিক জ্ঞান থাকলেই কেবল আলোকিত ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব। এ লক্ষ্যে পার্বত্য তিন জেলায় কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে যে কাজ চলছে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সামাজিক সংস্কারের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের প্রতিবন্ধকতা জয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের উচিত এ সময়ে তাদের সহায়তা করা। তাহলে কিশোর-কিশোরীরা কুশিক্ষা পাবে না। পার্বত্য অঞ্চলে কিছু বাধা অন্য এলাকার চেয়ে বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকালই মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বলেছি, পার্বত্য জেলাগুলোতে আরো বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে বাধা আসতে পারে। পড়শি, বোন, আত্মীয় হিসেবে কিশোরীদের সহযোগিতা করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষা, উন্নয়ন ও অধিকারে পার্বত্য জনগোষ্ঠী এখনো অনেক পিছিয়ে। বিএনপিএস সেই পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করছে। এরাই আগামী দিনের মা। আজকের প্রেক্ষিতে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. ছেহেলী নার্গিস। বিএনপিএসের সুমিত বণিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা, খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নুপুর কান্তি দাশ, বান্দরবানের পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক ডা. অং চালু, রাঙামাটির পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক আনোয়ারুল আজিম, খাগড়াছড়ির পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক এমরান হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুন, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট বান্দরবান সুরাইয়া আক্তার সুইটি, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইয়াসির আরাফাত, উন্নয়ন সংস্থা তাজিংডং এর নির্বাহী পরিচালক চিং সিং প্রু, উন্নয়ন সংস্থা প্রগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা এবং তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেরীবাজারের ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা কোভিড ভ্যাকসিনের আওতায়
পরবর্তী নিবন্ধদুই ফিশিং বোটের তিনজন গুলিবিদ্ধ, ১১ জেলেকে জিম্মি