পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেয়ার সাথে সেবা সংস্থার কারা কারা জড়িত তাদের তালিকা করতে হবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা করা হবে। পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে স্থায়ীভাবে সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। উচ্ছেদ–পরবর্তী সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলো করণীয় ঠিক করবে। গতকাল চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৭তম সভায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন থেকে পাহাড়ে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের সংযোগ দেয়া বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড়ে থাকা গাছও কাটা যাবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সজাগ থাকবেন।
রেলওয়ের জায়গায় কী করে অবৈধ বসতি গড়ে ওঠে, সভায় সেই বিষয়ে রেলওয়ের প্রতিনিধির কাছে জানতে চান বিভাগীয় কমিশনার। সভায় উপস্থিত রেলওয়ের প্রধান ভূ–সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, রেলওয়ের সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসতি রয়েছে, তা সত্য। সব মিলে ৪,৪৭৬টি পরিবার রয়েছে। যাওয়া–আসার মধ্যেই থাকে এসব পরিবার। তিন–চারটি মামলাও রয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও অভিযান পরিচালনা করা দুরূহ বিষয়। আসলে রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ হচ্ছে বলেই অবৈধরা এ সুযোগ নিচ্ছে। বিদেশি অর্থায়নও হচ্ছে। আমাদের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। তখন বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, বাধা দেয়া হচ্ছে না কেন? উত্তরে সুজন চৌধুরী বলেন, বাধা দিয়েছি। চিঠিও দেয়া হয়েছে। রাস্তা, ড্রেন করার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধির কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, তারা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কিছু কিছু সুযোগ–সুবিধা দিয়েছেন। তবে বর্তমানে সুযোগ–সুবিধা বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, মতিঝর্ণায় ৫–৬ তলা ভবনও রয়েছে। উচ্ছেদ করতে গেলে ৫০০–১০০০ লোক জড়ো হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড় ক্ষতির দায়ে জেল জরিমানা করতে দেখিনি। শুধু মামলার সংখ্যা দেখি। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে আসছি। সম্প্রতি বলতলীঘোনায় ১০ একর জায়গা অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছি।
পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, যারা পাহাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে তাদের শো’কজ করা দরকার। লিগ্যাল কাগজপত্র ছাড়া কীভাবে সংযোগ দেয়া হলো? পাহাড়ে ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। বাকি ২০ শতাংশ অবৈধ দখলদার। তারা সেখানে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে। মাদক ব্যবসা রয়েছে। খুনও হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে না পারলে কেউ পারবে না।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, সব জায়গায় সংঘবদ্ধ চক্র থাকে। সমন্বিত উদ্যোগে তাদের প্রতিহত করতে হবে।
শুরুতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৬তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়ের বিষয়ে বলার কিছুই নেই। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে পাহাড় মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার পর যাতে বেদখল না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, পাহাড়ে বসবাসকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভাড়াটিয়া। অবৈধ দখলদারদের তালিকা করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মূল মালিক কাকে ভাড়া দিয়েছে, ভাড়ার শর্ত মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে। পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ মামলা এবং জেল–জরিমানা করতে পারে। উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
সভা শেষে পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম জসিমের পাহাড় কাটা ও পাহাড় দখলের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আবারো বলছি, সরকারের চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।