পাহাড়ে ‘আসল-নকল’ ধস

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১২ জুলাই, ২০২১ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড। সড়কটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের মানুষকে যেমন সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে, তেমনি পরিবেশ বিপর্যয়ে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে পেছনে ঠেলে দিয়েছে। আশপাশের পাহাড়ি ভূমিতে চোখ পড়েছে পাহাড় খেকোদের। রাস্তার লাগোয়া পাহাড়ি ভূমির দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। পাহাড়গুলোর দখল-বেখদল নিয়ে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াইও। আশপাশের প্রভাবশালীরা পাহাড়গুলো দখলে রাখতে শক্তির মহড়া শুরু করেছেন। দখলে থাকা পাহাড়ে রীতিমতো সন্ত্রাসীদের পাহারাও বসানো হয়েছে সড়কটির পাশে। সরেজমিন ৬ জুলাই মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটা। বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের মধ্যবর্তীস্থানে একটি পাহাড়ে উঠে আশপাশের কয়েকটি পাহাড় ধসের ছবি তুলেছি। এরপর মোটর সাইকেলে চলে আসার মুহূর্তে পেছন থেকে দুই যুবক ডাক দেন। তারা ছবি তোলার কারণ জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েও আজাদীর ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরার ছবি দেখতে উদ্যত হন। তবে কাদের পক্ষে তারা পাহাড়টি পাহারা দিচ্ছেন গত ৫ দিনে কয়েকবার ঘটনাস্থলে গিয়েও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সরেজমিন দেখা যায়, বায়েজিদসহ আশপাশের অসংখ্য পাহাড়ের চূড়ায় ধস নেমেছে। কিছু পাহাড়ে বৃষ্টির কারণে প্রাকৃতিকভাবে ধস হলেও কিছু পাহাড়ে চূড়া কাটার কারণেও ধস হচ্ছে। বিশেষ করে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোড প্রকল্প বাস্তবায়নে কাটা ১৬ পাহাড়ে ধস বেড়েছে। ইতোমধ্যে সড়কটির কয়েকটি অংশে ব্যারিকেড দিয়ে চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সড়কটির নির্মাণকারী সংস্থা সিডিএ। তাছাড়া সড়কটির লাগোয়া অসংখ্য পাহাড়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে উঠেছে সাইনবোর্ডও।
পরিবেশবিদরা বলছেন, পাহাড়ের বনে গাছ কেটে বন উজাড় করা এবং পাহাড়ে প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা জুম চাষের পরিবর্তে লাঙ্গল-কোদালের চাষ করার ফলে পাহাড়ে ধস বাড়ছে। আবার চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের পাহাড়গুলো কাটা থামানো যাচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে বর্ষাকালে পাহাড়ধস হচ্ছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিকভাবে চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো বালুময় পাহাড়। বয়সেও নবীন এসব পাহাড়ের ভেতরে অনেক ফাটল রয়েছে। তাই অতি বৃষ্টিতে ফাটলগুলোতে পানি ঢুকে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক রায় বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো ভারতের কাশ্মীর কিংবা নেপালের হিমালয় পর্বতের সমগোত্রীয় হলেও চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোর বয়স কম। এছাড়া চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোর গঠন এখনও মজবুত নয়। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলে, ভূমিকম্পজনিত সামান্য ঝাঁকুনিতে পাহাড়গুলো ধসে পড়তে পারে। তাছাড়া এখানকার পাহাড়গুলোর মাটিতে কাদার চেয়ে বালির মিশ্রণ বেশি। তাই চট্টগ্রামে পাহাড় ধস বেশি হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, লিংক রোড হওয়ায় সড়কটি আশপাশের জমির দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড়গুলোর কেনাবেচা শুরু হয়েছে। প্রভাবশালী লোকজন এসব পাহাড় কিনে নিয়ে সাইনবোর্ড তুলছেন। এখন বর্ষাকালে অনেক পাহাড়ের উপরে কেটে দেয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টিতে এসব পাহাড়ে কৃত্রিম ধসের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নূরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের পাহাড়গুলোর মধ্যে অল্প কিছু সরকারি হলেও বেশিরভাগই ব্যক্তি মালিকানাধীন। পাহাড় কাটার বিষয়ে বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে লকডাউনে অনেকে পাহাড়গুলো দখল করছে, সাইনবোর্ড তুলছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবাধিকার প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকার ব্রিটিশ দূতকে তলব
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয় শিল্প এলাকা বন্যহাতির তাণ্ডব