পাহাড়ধস মোকাবিলার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

| সোমবার , ২০ জুন, ২০২২ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে গত এক যুগে পাহাড়ধসে প্রায় দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস চলছে সমান্তরালে। বারবার উচ্ছেদ হলেও আবার পুরনো আবাসে ফিরে যায় বসবাসকারীরা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও দখলে জড়িতরা চিহ্নিত হলেও কখনও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ঘুরে ঘুরে বছর এসেছে। প্রশাসনে কর্মকর্তা আসে আর যায়। কেউ কেউ একাধিকবারও এসেছে-গেছে। পাহাড় বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়াটি থেমে থাকেনি। দখলকারীরা তাদের অবস্থানেই বহাল আছে। উল্টো প্রতিবছর নতুন পাহাড় কেটে আরও বসতি স্থাপনের কাজ চলছে।’

আমরাও বিশেষজ্ঞদের মতের সঙ্গে একমত। কেননা, পাহাড় দখল ও বিনষ্টে জড়িতরা অচেনা নয়। বিভিন্ন সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তাদের অনেকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না- সেটা অনেকের কাছে প্রশ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রশাসন আন্তরিক হলে এবং বছরজুড়ে সক্রিয় থাকলে পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। নিম্নবিত্ত মানুষকে পাহাড় থেকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে তাদের বিকল্প বাসস্থান ও জীবিকার কথা ভাবতে হবে।

এবারও টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের দুটি স্থানে পাহাড় ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নগরীর আকবর শাহ থানার ১ নম্বর ঝিল এবং বিজয় নগর এলাকায় এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আকবর শাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, রাত ১টার দিকে ১ ঝিলের বরিশাল ঘোনা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা একটি ঘরের উপর মাটি ধসে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এসে মাটির নিচ থেকে চারজনকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় চিকিৎসক দুই বোন শাহীনুর ও মাইনুরকে মৃত ঘোষণা করে। তাদের বাবা ফজলুল হক ও মা মোবাশ্বেরা বেগম আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে ভোরে ফয়’স লেক সী ওয়ার্ল্ডের পাশে বিজয় নগর এলাকায় আলাদা পাহাড় ধসের ঘটনায় লিটন ও ইমন নিহত হন বলে জানান পুলিশের এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এখানে উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এ বছরও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের শঙ্কা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো উচ্ছেদ করতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তা সত্ত্বেও পাহাড়েই বসবাস করছে শত শত পরিবার। এ কারণে ঘটছে প্রাণহানির মতো বড় দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই পাহাড়ধসের শঙ্কা বাড়ে। এরপর কিছু উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। ভারী বৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। বর্ষা চলে গেলে আর কোনো খবর থাকে না। যে কারণে প্রতিবছর পাহাড়ধসে প্রাণহানি হচ্ছে। একইসঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে বিপুল সম্পদ।

নগরীর বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতা, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের লেজুড়বৃত্তি, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করাসহ সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় পাহড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রোধ করা যাচ্ছে না। তাদের নির্লিপ্ততার কারণে ছিন্নমূল, বানেভাসা, নদীভাঙা, জলবায়ু তাড়িত, ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলো নগরীতে এসে কম টাকায় থাকতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিতে পড়ছেন। যে কারণে প্রতিবছর বর্ষায় চট্টগ্রামের কোনও না কোনও এলাকায় পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

পাহাড়ধসের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পাহাড়ধস হবে এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়, আর মানুষের প্রাণহানি তো নয়ই। কারণ এটা মনে রাখতে হবে যে, বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। পাহাড় কেটেও সমতল বানানো হয়েছে। গাছ না থাকায় মাটির কাঠামো দুর্বল হবে এটাই স্বাভাবিক। যার ফলে বৃষ্টি হলেই নামছে ধস এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়ে। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রভাবশালী মহলসহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়েই পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এছাড়া নানা ধরনের অভিযোগ উঠলেও পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা ও বসতি নির্মাণ বন্ধ হয়নি এমনটিও বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে- যা অত্যন্ত উদ্বেগের।’

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, পাহাড়খেকোদের কবলে পড়ে কেবল চট্টগ্রামেই গত এক দশকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৩৫টি পাহাড়। এছাড়া অনেক পাহাড় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে বলেও জানা গিয়েছিল। তাই পাহাড়ধসসহ যে কোনো দুর্যোগ স্থায়ীভাবে মোকাবিলার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে