পাহাড়তলী এলাকায় ছয় হাজার কাঠারও বেশি ভূমি সংঘবদ্ধ চক্র দখল করে নিয়েছে। এসব ভূমিতে থাকা অগুনতি পাহাড় ও টিলা সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে পাকা, আধা পাকা, কাঁচাসহ দুই হাজারেরও বেশি স্থাপনা। হয়েছে বিভিন্ন নামে আবাসিক এলাকা, বসতি। যথাযথ নজরদারি এবং কঠোর পদক্ষেপের অভাবে দিনে দিনে দখলদারিত্ব সমপ্রসারিত হচ্ছে। বড় ধরনের ক্রাশ প্রোগ্রাম ছাড়া ছোটখাটো অভিযানে এসব সরকারি ভূমি উদ্ধার কিংবা প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। অভিযোগ রয়েছে, ভূমিদস্যুরা এলাকাটিতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশও তৈরি করেছে। আর বিভিন্ন এনজিও এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নগরীর ফয়’স লেক এবং আশেপাশে পাহাড়তলীর তিনটি মৌজায় কয়েক হাজার একর ভূমি রয়েছে। এসব ভূমির একটি বড় অংশের মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত অনেক জমিও রয়েছে এলাকাটিতে। এরমধ্যে ফয়’স লেক ও আশেপাশের প্রায় ৩৩৬ একর জমি কনকর্ড গ্রুপ দীর্ঘমেয়াদী লিজ নেয়। ২০০৪ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং পর্যটন কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে চুক্তিটি সম্পাদিত হয়। কিন্তু চুক্তি করলেও একশ’ একরেরও বেশি ভূমিতে কনকর্ড কখনো যেতে পারেনি।
জানা গেছে, উল্লিখিত এলাকায় ছয় হাজার কাঠারও বেশি ভূমি অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। যার বাজার মূল্য অন্তত তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে পাহাড় কেটে এসব এলাকায় দুই হাজারেরও বেশি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। বাসা বাড়ির পাশাপাশি অসংখ্য দোকানপাটও গড়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে ঝিল-১, ঝিল-২, ঝিল-৩ এলাকা। ফয়’স লেক সি ওয়ার্ল্ডের পিছনে শান্তিনগর, মধ্যমনগর, জিয়ানগর এলাকাও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পাহাড় কেটে। সিটি কর্পোরেশনের লেকসিটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নেও বেশ কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। জয়ন্তিকা আবাসিক এলাকা বাস্তবায়ন করতেও কাটা হয়েছে পাহাড়।
প্রশাসনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, এসকল পাহাড় হচ্ছে এনজিওগুলোর প্রজেক্ট গ্রহণ ও বাস্তবায়নের স্বর্গরাজ্য। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও এখানে স্যানিটেশন, স্কুলিং প্রজেক্ট, বেবি ও মাদার হেলথ কেয়ার সহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত তা সম্ভব হয়নি। সংঘবদ্ধ ভূমি দস্যুদের কবজা থেকে এলাকাটিকে উদ্ধার চট্টগ্রামের প্রশাসনের জন্য যেন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। পাহাড় সাবাড়ের পাশাপাশি চট্টগ্রামের পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এই দখলদারিত্ব বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ নরুল্লাহ নুরী সরজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। দেখে এসেছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারাও। কিন্তু ছোটখাট আয়োজনে এসব ভূমি এবং পরিবেশ রক্ষা অসম্ভব বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
জেলা প্রশাসনের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বড় ধরনের ক্রাশ প্রোগ্রামের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, লোকচক্ষুর অন্তরালে অনেক বড় একটি সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে সংকট ততই প্রকট হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া না হলে পরে অনেক চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।