পাহাড়-লেকের মিশেল মানিকছড়ি ডিসি পার্ক

গড়ে তোলা হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়, উপত্যকা, অরণ্যসহ অসংখ্যা ঝরনার জনপদ খাগড়াছড়ি। এক সময় পহাড়ি এই জেলার অর্থনীতি ছিল কৃষি ও প্রকৃতি নির্ভর। তবে সম্প্রতি জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। গত এক দশকে জেলায় পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। ২০১৩ সালে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে খাগড়াছড়িতে পর্যটক সমাগম ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। যাতায়াতের সুবিধার্থে সাজেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা ভ্রমণ তালিকায় খাগড়াছড়িকেও যুক্ত করেছে। ফলে সাজেকের পাশাপাশি খাগড়াছড়িও পর্যটকদের আর্কষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলায় পর্যটক সমাগম বাড়ানোর লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন বেশকিছু উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আলুটিলা, রিছাং ঝরনা ও জেলা পরিষদ পার্কের সীমিত পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করতে উপজেলা পর্যায়েও পর্যটন শিল্প বিকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ির প্রবেশদ্বার হিসেবে মানিকছড়ি উপজেলায় ডিসি পার্ককে ঘিরে প্রকৃতিবান্ধব পযটনের সূচনা করেছে জেলা প্রশাসন।

প্রায় ১৬০ একর এলাকা বেদখলমুক্ত করে পার্কটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রকৃতিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পার্কে ২২টি টিলা ও ৩টি লেক পর্যটকদের মনের তৃষ্ণা মেটাবে। পার্কের ভেতরে তাবু বাসের সুযোগও রয়েছে। নিসর্গপ্রেমীরা এখানে রাতও কাটাতে পারবে। তাবু বাসের পাশাপাশি অরণ্য কুটির রিসোর্টেও রাত কাটানো যাবে। পার্কের গোধূলি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্যপট দেখে মুগ্ধ হবে যে কেউ।

ইতোমধ্যে ডিসি পার্কের ২০ একর জায়গাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পাখিবান্ধব গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। পার্কের ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা বন্যপ্রাণী ও পাখিদের নিরাপত্তা দিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটিই জেলার প্রথম পাখির অভয়ারণ্য। বন মোরগের পাশাপাশি এখানে মাঝে মাঝে দুর্লভ মথুরাও দেখা মিলে।

এমন প্রকৃতি বান্ধব পর্যটনকে স্বাগত জানিয়েছে পরিবেশবাদীরাও। প্রকৃতিবান্ধব সংগঠন পিটাছড়া বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, এটি অসাধারণ উদ্যোগ। কারণ এখানে জীব বৈচিত্র্যকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ হবে। এখানে একশ প্রজাতির দেশীয় বৃক্ষ লাগানো হচ্ছে। যার মধ্যে এখন দুলর্ভ প্রজাতি রয়েছে। এসব গাছপালা বড় হলে পাখিদের জন্য তা নিরাপদ হবে। প্রকৃতিবান্ধব পর্যটনের এই মডেলটা যেন খাগড়াছড়িতে ছড়িয়ে যায়।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী বলেন, এটা যেহেতু বনে ঘেরা টিলা ও লেকবেষ্টিত তাই এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি রির্সোটও নির্মাণ করা হবে। পার্কে যাতায়াত সহজ করার জন্য সড়কটি সংস্কার করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মানিকছড়ি ডিসি পার্ক এক অনন্য প্রাকৃতিক নিসর্গের স্থান। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় ও জনবসতি না থাকায় এতে দেখা মেলে বনমোরগ, মথুরাসহ বিভিন্ন প্রজাতি পাখির নিরাপদ আশ্রয় হবে পার্কটি। পাখির যথাযথ প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব এবং আশেপাশের মানুষজনের অজ্ঞানতাবশত শিকারের মানসিকতাএসব চিন্তা করে, নিরাপদ পাখির আবাসস্থল হিসেবে পার্কের ২০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্য। এই উদ্দেশ্যে ডিসি পার্কের বিভিন্ন গাছে সুবিধাজনক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে ১০০ মাটির হাড়ি দিয়ে বানানো পাখির বাসা। এই বাসাগুলো পাখিদের আকৃষ্ট করবে এবং নিরাপদবোধ করলে অন্যান্য পাখিও এখানে থাকবে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এখানের ক্যাম্পিংকে আমরা গুরুত্ব দিব। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে এখানে ইকো রির্সোট গড়ে তুলব। প্রাথমিকভাবে আমরা অবকাঠামো নির্মাণ করছি। ভবিষ্যতে কীভাবে এটিকে আরো পর্যটনবান্ধব পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।

ডিসি পার্ককে ঘিরে আশার কথা শোনালেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান । তিনি বলেন, পুরো জেলায় পর্যটনকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে মানিকছড়িতে প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন গড়ে তেলা হচ্ছে। পার্কে জিপলাইন, জায়ান্ট সুইং, আর্চারি পয়েন্টসহ বিভিন্ন এডভেঞ্চার একটিভিটি চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ড্রব্রিজের মাধ্যমে লেকগুলোকে যুক্ত করে যোগ করা হবে লেকে কায়াকিংয়ের সুবিধা। ভবিষ্যত পর্যটনের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে ক্যাম্পিংসহ আবাসন সুবিধা আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে বহুগুণ, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করা পাশাপাশি দেশের পর্যটন অর্থনীতিকেও বেগবান করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফলতা
পরবর্তী নিবন্ধবরফ গলে অ্যান্টার্কটিকায় ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু