থেমে নেই পাহাড়কাটা। অবিরাম চলছে পাহাড় কাটার এই যজ্ঞ। পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করা হচ্ছে, ছোট্ট পরিসরেই গড়ে তোলা হচ্ছে বসতি। অবৈধভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক ঘর। এ বিষয়ে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের লোকজনও কম দায়ী নন।
গত ২৩ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে ‘পাহাড় কেটে প্লট তৈরির চেষ্টা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নগরীর বায়েজিদ থানাধীন বাংলাবাজার ও জালালাবাদে পাহাড় কেটে প্লট তৈরির চেষ্টার অভিযোগে যৌথ অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। গত ২২ আগস্ট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও হাটহাজারী উপজেলার এসিল্যান্ড মো. আবু রায়হানের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও বায়েজিদ থানার একটি টিম উপস্থিত ছিলেন। এসিল্যান্ড মো. আবু রায়হান আজাদীকে বলেন, অভিযানে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি বলেন, অভিযানে দেখা যায়, চারপাশে উচু করে টিনের বেড়া দিয়ে ভেতরে পাহাড় কেটে প্লট তৈরির চেষ্টা করছে। সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। এ সময় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আশেপাশের ব্যক্তিদের কাছ থেকে যারা পাহাড় কর্তন করেছে তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি এবং সাইনবোর্ডে প্রাপ্ত নাম অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ জারি করেছে। আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড় কাটার ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটার দায়ে জেল জরিমানা ও মামলা দায়েরসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত ১২ আগস্ট লিংক রোডে পাহাড় কাটার দায়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আমরা প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। এই মাটি নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যায়।
পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। ভূমিধস আমরা দেখেছি, দেখেছি মৃত্যুর সারি। আগামীতে আরো ঘটতে পারে মারাত্মক ভূমিধস।
কালের বিবর্তনে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বনজ সম্পদের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। দেশে বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৬ লাখ হেক্টর। দেশের মোট আয়তনের প্রায় শতকরা ১৭ দশমিক ৬২ ভাগ বনভূমি।
অবৈধভাবে নির্মিত ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে পাহাড়ে প্রাণহানির মতো দুঃখজনক ঘটনা রোধ করতে হবে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় ভিজিলেন্স বাড়ানোর জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে তেমন উল্লেখযোগ্য অভিযান নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে সেগুলোতেই অভিযান চালানো হয়। এর বাইরে আরো অনেক জায়গায় পাহাড় কাটা চলছে। জরিমানা করেই তারা দায়িত্ব শেষ করে। এরপর পাহাড়কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় সেটা অপূরণীয়। তাঁরা বলেন, পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস চলতে থাকলে ভবিষ্যতে করোনার চেয়ে আরো বড় মহামারি এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ ফলাফল অপেক্ষা করছে। সে জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রয়োজন পাহাড় রক্ষায় টানা অভিযান। পাশাপাশি প্রভাবশালীদের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।