‘পাহাড় ভাঙি পড়লেও এ্যানেই আরার থাকতে হইবো’

সীতাকুণ্ডে ধসের শঙ্কা, সরছে না বাসিন্দারা

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | শনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

ধসের আতঙ্কে রয়েছেন সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা। পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকলেও একমাত্র আশ্রয়স্থল ছেড়ে কোথাও যেতে চান না তারা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি গড়ে তোলা এসব লোকজনকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়ারও কোনো উদ্যোগ প্রশাসন নিচ্ছে না।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে যে কোনো সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানীর সম্ভাবনা রয়েছে। গত দুইদিন ধরে কয়েকদফা মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু তারা বসতি ছেড়ে কোথায় উঠবে তা নিশ্চিত হতে পারছেন না। একদিকে মৃত্যুর ভয় অন্যদিকে বসতভিটা ছাড়ার ভয়।

উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন, পৌরসভা, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ে ৯৭৩ জন ত্রিপুরা, ১২৬ জন চাকমা, ১৫০ জন মারমা, অন্য নৃগোষ্ঠীর ১৭০ জন বাস করছে।

উপজেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, কুমিরা, সোনাইছড়ি পার্বত্য এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক আদিবাসী পরিবার বসবাস করছে। তারা পাহাড়ের টিলায় ও ঢালুতে বসতি স্থাপন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন। উপজেলা প্রশাসন বর্ষায় মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করলেও এরা পাহাড় থেকে সরতে চান না। উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত ৬৫টি ত্রিপুরা পরিবারই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাহাড়ের ঢাল কেটে টিন, শণ ও বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকছে লোকজন। আবার কোথাও মাটির দেয়াল দিয়ে ঘর তৈরি করে থাকছে অনেকে। তাছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে পুর্নবাসন করার কোন সরকারি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। তারা বসতভিটা ছেড়ে কোথায় যাবেপ্রশাসনের সে ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যথা নেই।

জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বাসিন্দার আসমা বেগম জানান, সাগরের পানি বাড়িঘর সব ভাইস্যা নিয়ে গেছে। তারপর থেকে পাহাড়েই ঠাঁই নিছি। পাহাড় ভাঙি পড়লেও এ্যানেই আরার থাকতে হইবো। এটাই আরার জীবন।

ছোট কুমিরা পাহাড়ে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম ও জয়নাল জানান, এলাকায় কোন আত্মীয়স্বজন নেই, যাব কোথায়?

দক্ষিণ সোনাইছড়ি পাহাড়ের বাসিন্দা কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড় ধসে প্রাণ গেলেও কী করার আছে? সরকার যতদিন ভূমির ব্যবস্থা করবে না, ততদিন ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, টানা বৃষ্টিতে যে কোন সময় পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মাইকিং করা হয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাতির বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ!
পরবর্তী নিবন্ধআদর্শ মানুষ গড়তে মহানবীর (দ.) আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই