কয়েকদিন আগে পত্রিকার পাতায় দেখলাম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকার বেশ কিছু পাহাড় ধ্বংসের মুখোমুখি। নানা রকম বনজ সম্পদের উৎস ছিল সীতাকুণ্ডের পাহাড়। আজ সম্পদ বহুল এই পাহাড়ের অনেক জায়গা ধু–ধু মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। পাহাড় ও উপকূলের সমন্বয়ে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৫,০০০ একর। অত্র অঞ্চলের সবুজ বন দিন দিন উজার করার পায়তারা করছে এক শ্রেণির অসাধূ ভুমি ব্যবসায়ী। বাড়বকুণ্ড, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী, বাংলা বাজার, বায়েজিদ রোড, জঙ্গল লতিফপুর, জঙ্গল সলিমপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট–বড় পাহাড়ি টিলা কেটে সমতলে পরিণত হওয়ায় চরম হুমকীতে পড়েছে বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য।
এই পাহাড়গুলোকে মাটি কেটে সমতল ভূমি বানানোর প্রচেষ্টায় আছে কিছু লোভী মানুষ। সীতাকুণ্ড ছাড়াও বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কঙবাজারে পাহাড় নিধন অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। কিছু অসাধু মানুষ ইটভাটার প্রয়োজনে মাটি কেটে এবং ভূমিদস্যুরা পাহাড় দখল করে সমতল বানানোর প্রচেষ্টায় অথবা কৃষিকাজের প্রয়োজনে মাটি কেটে নেওয়ায় পাহাড়গুলোকে ধ্বংস করছে। এই মানুষ নামের অমানুষগুলো পাহাড়গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ না করে বরং পাহাড় কেটে সমতল বানাচ্ছে। তছরুপ করে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে মানুষ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পাহাড় পর্বতগুলো তছরুপের শিকার হচ্ছে। তার মধ্যে বৃক্ষনিধন ও মাটিকাটা অন্যতম। এই পাহাড় নিধনের ফলে প্রকৃতির প্রতিশোধও বারবার নেমে আসে। বর্ষা এলেই পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে দুর্যোগ নেমে আসে। অতিবর্ষণে পাহাড়ের মাটির ধস নেমে অসংখ্য প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পাহাড় ধসের ঘটনায় গত ১৫ বছরে শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ৩ শতাধিকের বেশি। অবাধে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন ও অপরিকল্পিত চাষাবাদের কারণে বান্দরবানসহ পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমি ধস বেড়ে যাচ্ছে। ঝর্না ও নদীর পাড়ে ঘনবসতি গড়ে ওঠায় শঙ্খ নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি বেড়ে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। অনেকে বলেন, নদীর পাশে পাহাড়ের পাথরগুলো একশ্রেণির মানুষ অবৈধভাবে উত্তোলন করে বাইরে বিক্রয় করে দিচ্ছে ফলে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। একটা দেশে শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন অথচ আমাদের দেশে শতকরা ১৭ ভাগের কাছাকাছি বনভূমি আছে। যে হারে পাহাড় এবং পাহাড়ি বন ধ্বংস হচ্ছে, সে হারে বনায়ন হচ্ছে না। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতিনিয়ত পাহাড় কাটা পড়ছে। যে পাহাড়গুলো ধ্বংস হয়েছে সেগুলো আর ফেরত পাওয়া যাবে না তবে যা এখনো আছে তা আমাদের রক্ষা করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়ার মাধ্যমে পাহাড় ধ্বংস ঠেকাতে হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় কাটার ব্যাপারেও কঠোর বিধিনিষেধ এবং পর্যাপ্ত জবাবদিহিতা থাকতে হবে। যে সব প্রতিষ্ঠান পাহাড় নিধন করার সাথে জড়িত তাদের জন্য প্রয়োজনে কঠোর আইন তৈরি করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যত বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করব ততবেশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছাকাছি আমরা পৌঁছে যাব। তাই সময় থাকতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।