পাহাড় কেটে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর জমি জলাশয়

রাঙ্গুনিয়ার কোদালার বনাঞ্চল

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় কেটে পুকুর, জলাশয়, ধানি জমি ভরাটের মহোৎসব বন্ধ করা যাচ্ছে না। দেশের পট পরিবর্তনের পরও বন্ধ হয়নি এই পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ড। সমপ্রতি উপজেলার কোদালা বনবিটের মালিকানাধীন একাধিক বনাঞ্চলে চলছে পাহাড় কাটা। এসব বন্ধে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে একাধিক অভিযান চালানো হয়। এমনকি ট্রাক জব্দ করে মামলাও দেয়া হয়েছে। তবুও পাহাড় কাটা থামানো যাচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, চন্দ্রঘোনা ইকোপার্ক হয়ে নিশ্চিন্তাপুর যাওয়ার পথেই সড়কের পাশে পাহাড়ের গায়ে বিশালাকার কাটার চিহ্ন দেখা গেছে। ইতিমধ্যেই পাহাড়টি নিশ্চিহ্নের পথে রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এরসাথে জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। তারা একাধিক সিন্ডিকেটে বিভক্ত হয়ে বনের একেকটি পাহাড় দখল করে মাটি কেটে পাচার করছে। কোদালা বনাঞ্চলের চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম, সেগুনবাগান, কলাবাইজ্যাঘোনা, বটতলী, ধুইল্যাছাড়ি, নিশ্চিন্তাপুর, ফুইট্টাগোদা, মহুত্ত্বেরঘোনা এলাকার পাহাড়গুলোতে চলছে মাটি কাটা। রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে মাটিগুলো ট্রাকযোগে পাশ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্নস্থানে পুকুর, খাল, জলাশয়, ধানি জমি ভরাটে পাচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পাহাড়ের মাটি পাচার। রাতভর চলে এই যজ্ঞ। দুর্গম বনাঞ্চলের পথ অতিক্রম করে সড়কে নেমে আসে মাটির ট্রাকের বহর। এতে বিরক্ত স্থানীয়রাও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পশ্চিম বনগ্রাম ধুইল্যাছড়ি পাহাড় কাটা মাটির ট্রাক বনাঞ্চল অতিক্রম করে স্থানীয় দরগাহ সড়ক হয়ে এবং বনগ্রাম সেগুনবাগান এবং কলাবাইজ্যাঘোনা পাহাড়ের মাটি কোদালা বন বিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছায়। নিশ্চিন্তাপুর, ফুইট্টাগোদা, মহত্ত্বের ঘোনা বনাঞ্চলের পাহাড় কাটা মাটির ট্রাক নিচিন্তাপুর সড়ক হয়ে মোগালের হাট এলাকার গ্রামাঞ্চলে যায়। উভয় এলাকা দিয়ে প্রতি রাতে শতাধিক ট্রাকে মাটি পাচার হয় বলে জানান স্থানীয়রা। প্রতিরোধের কঠিন ব্যবস্থা না থাকায় বহাল তবিয়তে চলছে পাহাড় কাটা।

বনগ্রাম সেগুন বাগান এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক জানান, পাহাড়ের মাটি কাটার সময় বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের লোক বসা থাকে। তাই প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালাতে গেলে আগে থেকে খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রাও তাদের বাধা দিতে ভয় পায়।

কোদালা বন বিট কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান পলাশ বলেন, বনাঞ্চলে পাহাড় কাটার ভয়ংকর পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সহায়তায় প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীর সহায়তায় একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু জড়িতদের পাওয়া যায়নি। সমপ্রতি তিনটি ট্রাক জব্দ করে তিনটি মামলা দেয়া হয়েছে। রাত ১২টার পর পাহাড় কাটার কাজ চালায় তারা। মাত্র দুইজন বনকর্মী দিয়ে তা ঠেকাতে বেগ পেতে হয় বলে জানান তিনি। তারপরও পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। এরসাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথার্টিফার্স্ট নাইটের আয়োজন নেই,তবুও কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল
পরবর্তী নিবন্ধগুম : হাসিনার বিরুদ্ধে এবার লিখিত অভিযোগ মাইকেল চাকমার