পাহাড় কাটা রোধে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে

| মঙ্গলবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না পাহাড় কাটা। অবিরাম চলছে পাহাড় কাটার যজ্ঞ। পাহাড় কেটে ছোট্ট পরিসরেই গড়ে তোলা হচ্ছে বসতি। অবৈধভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক ঘর। এবিষয়ে প্রভাবশালীদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের লোকজনও কম দায়ী নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নিত্য নতুন এবং অভিনব কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড়। প্রভাবশালীদের ধরন বদল হয়েছে, কিন্তু পাহাড় কাটার চিত্র একই রয়ে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করেছে, জরিমানা করেছে। কিন্তু থামছে না পাহাড় কাটা। গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামে অন্তত ১২০টি পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। বাকি যে পাহাড়গুলো আছে সেগুলোও কেটে চট্টগ্রামকে পাহাড়শূন্য করার তোড়জোড় চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করে বলেছে, লোকবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতায় পাহাড়খেকোদের ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পাহাড় কাটার কৌশলটা এবার অন্যরকম। অভিনবই বলতে হবে। পাহাড়ের ঘাস আর মাটি কেটে স্তরে স্তরে ভাগ করে তৈরি করা হয়েছে জমি। কোনোটাতে সবজি চাষ করা হয়েছে, কোনোটাতে এখনো বীজ ফেলা হয়নি। চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানাধীন ওয়ার্লেস এলাকার বিএডিসি রোডের কাঁঠালবাগানে মাদানী নগরের একটি পাহাড়ের দৃশ্য এটি। স্থানীয়রা বলছেন, এটি পাহাড় কেটে শেষ করার একটি কৌশল। পাহাড় উপরের অংশে এমনভাবে কাটা হয়েছে, বর্ষায় ধসে পড়বে মাটি। তারপর ধীরে ধীরে মাটি কেটে আরো সমতল করা হবে। ওই এলাকার আশপাশেও পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে প্লট। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘১৯৭৬ সালে নগরীর পাঁচটি থানা এলাকায় ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে ঠেকে। মাত্র বছর কয়েকের মধ্যে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কেটে ফেলা হয়। এটি মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ বলে একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো এলাকার সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষায়ও রেখে আসছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু জমির মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এক শ্রেণির মানুষ পাহাড় কাটায় মেতে ওঠে। রাতেদিনে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয় বড় বড় আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবন। আইনের শিথিলতাসহ নানা দুর্নীতির কারণে পাহাড়খেকোদের সামলানো যায়নি। দিনের পর দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকার পাহাড় কেটে শেষ করা হয়েছে।’

আমরা প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। এই মাটি নিচু এলাকা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যায়। পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগদিনের পর দিন পাহাড় কেটে নগরীতেও বসতি নামের মৃত্যুপুরী গড়ে তোলা হলেও তা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের যেন কোন মাথাব্যথাই নেই। অথচ পাহাড় কাটা রোধ ও বিপন্ন হওয়া থেকে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের আইনগত প্রতিষ্ঠান এটি। যতক্ষণ তৃতীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ না আসে কিংবা গণমাধ্যমে রিপোর্ট না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার ধূম চললেও তাদের তেমন পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। যদিও এ অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি পরিবেশ অধিদপ্তরের। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারার নেপথ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকেই বড় করে দেখেন পরিবেশবিদরা। তাঁরা বলেন, ক্ষমতাশালী লোক যদি পাহাড় কাটে তাহলে অধিদপ্তরের কতটুকুইবা করার মতো থাকে। তাই অধিদপ্তরের পদক্ষেপকে ছোট করে দেখাটা ঠিক হবে না।

পাহাড়খেকোদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হওয়ার শঙ্কা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে। তাই পাহাড় কাটা রোধে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে নাগরিকদের সমন্বিত উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে