নগরীর বায়েজিদ থানাধীন জালালাবাদের মাঝের ঘোনায় রাতে দিনে পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অবশেষে গতকাল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ পাহাড় কাটা ঠেকাতে তিন দফায় অভিযান চালিয়েছে। তবে পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে পাহাড়খেকোরা গা ঢাকা দেয়।
দৈনিক আজাদীতে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের প্রতিনিধিদল গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারাও পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়েছে। প্রভাবশালী একটি মহল এই পাহাড় কাটার সাথে জড়িত বলেও সূত্র জানিয়েছে। দৈনিক আজাদীতে গতকাল ‘আগে পাহাড় কাটা হতো রাতে, এখন দিনেও কাটে’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। তারা পাহাড় কাটার প্রমাণ পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। গতরাতে এই মামলা রেকর্ড করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস জাহান জানিয়েছেন, পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়ার পর তিন দফায় অভিযানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই পাহাড় কাটার সাথে জড়িত লোকজন গা ঢাকা দেয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় পুলিশ যাওয়ার খবর পাওয়ার সাথে সাথে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মামলার আসামি এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর সাহেবকে নিয়ে আমরা বহুভাবে চেষ্টা করেও এদের ধরতে পারিনি। তবে তাদের শেষ রক্ষা হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পাহাড় কাটার সাথে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত এবং অতি প্রভাবশালী একটি গ্রুপ জড়িত বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে, তারা এলাকায় বেশ কিছু জায়গা কিনেছে এবং বেশ কিছু সরকারি জায়গা দখলও করেছে। তাদের জায়গায় যাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য এলাকাগুলো ক্রমান্বয়ে দখল করার জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার একটি রাস্তা নির্মাণের তোড়জোড় চলছে। প্রায় ২৫ ফুট প্রস্থ করে রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছে। এই রাস্তা তৈরির জন্যই মূলতঃ রাতে দিনে পাহাড় কাটা চালানো হচ্ছিল। ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড এবং ভাটিয়ারী বড় দিঘীর পাড় লিংক রোডের সাথে সংযোগ ঘটানোর জন্য রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই রাস্তা নির্মাণে সরকারের কোনো সংস্থার কোন অনুমোদন না থাকলেও প্রভাবশালী মহলটি নিজেরাই রাস্তা তৈরি করছে। রাস্তা তৈরির পর সরকারের কয়েক হাজার একর খাস জায়গা দখল করে প্লট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি মিশন নিয়েও চক্রটি কাজ করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক আজাদীতে গতকাল বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ করলে বেলা এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের একটি প্রতিনিধিদল উক্ত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি আহ্বান জানান। বেলা এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের পক্ষ থেকে কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়েছে। বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমানের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিমে ছিলেন বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহী, গ্রিন ফিঙ্গারস কো–ফাউন্ডার রিতু ফারবি এবং সীতাকুণ্ড থানার এস আই মনির আহমদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ ইকবাল বাবু গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পুলিশের উপর্যুপরি অভিযানে গতকাল দুপুরের পর থেকে পাহাড় কাটার সাথে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছে। পাহাড়গুলো রক্ষার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর এবং পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাসান আহমেদ পাহাড় কাটার ব্যাপারে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন।