চকবাজার গোয়াছিবাগান এলাকায় চমেক হাসপাতালের মালিকানাধীন পাহাড় না কেটেই বার্ন ইউনিট তৈরি করবে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ও চট্টগ্রামের পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে পাহাড়ের কেটে ফেলা অংশের পাশে রিটেইনিং ওয়াল দিয়ে গাছ লাগানো হবে মর্মেও ঐকমত্য হয়। বৈঠকে পরিবেশ কর্মীদের পক্ষ থেকে পাহাড় রক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের একটি কপি চমেক হাসপাতাল পরিচালককে হস্তান্তর করা হয়।
আলোচনার এক পর্যায়ে কেটে ফেলা গাছের শেকড় উৎপাটন করলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়টি ধ্বসে পড়বে এবং পেছনের আরেকটি পাহাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে– পরিবেশবাদীরা এমন যুক্তি উত্থাপন করলে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিকড় উঠানো হবে না মর্মে আশ্বস্ত করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেল সংলগ্ন গোয়ছি বাগান পাহাড়ের কিছু অংশ কেটে বার্ন ইউনিট নির্মাণ করবে চমেক কর্তৃপক্ষ এই মর্মে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা গত ৬ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর এবং চমেক হাসপাতাল পরিচালককে নোটিশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পরিবেশ সংগঠনদের সমন্বয়ে সামাজিক আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ গতকাল সকালে এই বিষয়ে পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে আগ্রহ দেখালে বেলা চট্টগ্রাম অফিসের সমন্বয়কারী মনিরা পারভিন রুবা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক স ম বখতেয়ার, বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার সাংবাদিক আলীউর রহমান, পরিবেশ সংগঠক মারুফ হাসান রুমি, গ্রিন ফিংগার কো ফাউন্ডার রিতু পারভিন, বেলার কর্মকর্তা ফারমিন এলাহি ইরা চমেক পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চমেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিট পরিকল্পনা ম্যাপ উপস্থিত পরিবেশ কর্মীদের প্রদর্শন করে তার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। সেই সাথে গোয়াছি বাগান পাহাড় কাটা বা উক্ত পাহাড় এলাকা থেকে কোনো ধরনের মাটি অপসারণ করবেন না বলে জানান। তিনি বলেন, উক্ত এলাকায় ইতিমধ্যে দুই হাজারের অধিক দেশীয় গাছ লাগানো শুরু হয়েছে। এছাড়াও পাহাড়ের গোড়ায় গাইড ওয়াল দিয়ে বার্ন ইউনিট ভবনটি তৈরি করা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গতকাল সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্ত্বরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, গ্রিন ফিংগার্স ও ভোরের আলো নামের পাঁচটি সংগঠনের উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এক সময় পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রাম মহানগরী দেশি–বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করত। কিন্তু এখন সেই নগরী জলাবদ্ধতার নগরীতে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর নগরীর ৬০ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়ে গেছে। বাকি ৪০ শতাংশেও পড়ছে কোদালের আঘাত। এই অবস্থা বন্ধ করা না গেলে একটি পাহাড়ও অবশিষ্ট থাকবে না।