চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, সামপ্রতিক সময়ে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি–বাঙালিদের মধ্যে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। খাগড়াছড়িতে সহিংসতার পর পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দবানেও অশান্ত বিরাজ করছে। সাজেকে আটকা পড়েছে দেড় হাজার পর্যটক। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় রাখতে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাজেকে আটকা পরা পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গতকাল নগরীর সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চোরাচালান নিরোধ আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা ও বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সনাতন সমপ্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিমা তৈরির স্থান, মন্ডপে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময়, পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা ও বিসর্জন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। দুর্গাপূজা নিয়ে কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ বিসর্জনস্থানে পর্যাপ্ত আলোকায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র আযান ও নামাজের সময় পূজা মন্ডপে উচ্চস্বরে বাদ্য–বাজনা না বাজালে সমপ্রীতি অটুট থাকবে। পূজা চলাকালীন যাতে সকলের মাঝে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি বজায় থাকে সে ব্যাপারে মসজিদে নামাজ পরবর্তী বয়ানে ঈমামরা আগত মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করবেন।
মনসুরাবাদস্থ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে সেবাপ্রার্থীরা নিয়মিত হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সমন্বয় সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাসপোর্ট অফিসের যাতে দুর্নাম না হয়, সেবা নিতে গিয়ে কেউ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে ও কেউ যাতে কোন ধরনের সুবিধা আদায় করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মাঝে মাঝে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সাথে লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাদের অবস্থা দেখার জন্য মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. সাইদুল ইসলামকে তাগাদা দেন তিনি।
সমন্বয় সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজের গুনগত মান ঠিক রেখে বিগত দুই মাসের অগ্রগতি ও বাস্তবায়ন কতটুকু তা যথাসময়ে প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ করতে হবে। পাহাড় কাটা রোধসহ নদ–নদীগুলোর দখল, দূষণরোধসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সিডিএর কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, কোন বিল্ডিং, মার্কেট ও শপিং মলের জন্য গাড়ি পার্কিং সুবিধা ছাড়া সিডিএ প্ল্যান অনুমোদন করা যাবে না। সরকারি–বেসরকারি পাহাড় ও টিলা শ্রেণির জায়গায় আবাসিক ভবন বা স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়া যাবে না। এছাড়া যে সকল আবাসিক ভবনের পার্কিং প্লেস মার্কেট ও ফুড কোড বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর তালিকা করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এসব স্থাপনার তালিকা পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সামপ্রতিক সময়ের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো ক্রমান্বয়ে সংস্থারসহ অফিস ও অফিসিয়াল কার্যক্রমে প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার না করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার রায়, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল মান্নান, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. অং সুই প্রু মারমা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, কঙবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, লক্ষীপুরের জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার ও ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।