খাগড়াছড়িতে মরুভূমির খেজুর চাষ করে মিলেছে আশাতীত সাফল্য। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় খেজুরের চাষাবাদ শুরু করেন মো. নুরুল আলম নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা। উপজেলার রসুলপুর এলাকায় পাহাড়ি টিলা ভূমিতে এর আবাদ শুরু করেন তিনি। চারা রোপণের তিন বছরের মাথায় গতবছর ফল আসতে শুরু করে। পাহাড়ের মাটিতে মরুভূমির খেজুরের বাম্পার ফলন দেখে নিজেই বিস্মিত হন নুরুল আলম। চলতি বছর দুই লাখ টাকারও বেশি খেজুর বিক্রির আশা করছেন তিনি।
সম্প্রতি খেজুর বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলদে–সবুজ রঙের খেজুর। সেখানে গাছের পরিচর্যা করছিলেন নুরুল আলম। তিনি জানান, আমি দীর্ঘ সময় সৌদি আরব ও বাংলাদেশের আইটি সেক্টরে কাজ করেছি। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই কৃষি সেক্টরে কাজ শুরু করি। ২০১৯ সালের দিকে পাহাড়ে ১৩ একর টিলা ভূমি কিনি। এরপরই শুরু করি স্বপ্নের কৃষি খামার গড়ে তোলার কাজ। তিন বছর বয়সী খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয় শ্রমিকদের। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। তিনি আরো বলেন, শতভাগ আমদানি নির্ভর খেজুরের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের মানুষের খেজুরের চাহিদা মেটানোর লক্ষে খেজুরের আবাদ শুরু করেছি। শিক্ষিত যুবকদের কৃষি সেক্টরে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমদানি নির্ভর ফলের চাষ করতে পারলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
শুরুর কথা বলতে গিয়ে নুরুল আলম জানান, ২০১৯ সালের দিকে সৌদি আরব ও ইংল্যান্ড থেকে ১০০টি টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করে পাহাড়ের পরিত্যক্ত টিলা ভূমিতে খেজুরের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করেন। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রথম বারের মতো ২৪টি গাছে ফলন দেয়। ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে সব গাছে ফলন আসবে বলে তিনি আশা করেন। বারোহি, আজওয়া, মিটজল ও আম্বার জাতের খেজুরের জাত রয়েছে তার। বাগানের প্রায় অর্ধেক গাছেই ইতিমধ্যে ফল ধরা শুরু হয়েছে। আগামী দেড়–দুই বছরে মধ্যে বাকি সব গাছে ফল ধরতে শুরু করবে। এবছর প্রায় দুই লাখ টাকার খেজুর বিক্রির আশা করা হলেও আগামীতে ফলন ভালো হওয়া সাপেক্ষে বিক্রি আরও বেশি হবে বলে আশা করেন তিনি।
মাটিরাঙা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় ফল। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া খেজুর চাষের অনুকূল। এ খেজুর একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। মাটিরাঙার রসুলপুরে নুরুল আলমের খেজুর বাগান পরিদর্শন করে সবধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তার বাগান দেখে মনে হচ্ছে এখানে খেজুর চাষ লাভজনক হবে।