পাহাড়ে দুর্লভ বনচালতা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | সোমবার , ১ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

আষাঢ়ের বিকাল। রাঙামাটির পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন মাইনী বন বিশ্রামাগারের সীমানায় চোখে পড়ল অচেনা এক বৃক্ষ। দেখতে চালতার মতো, তবে চেনা চালতা ফলের বদলে এখানে থোকায় থোকায় ঝুলছে ছোট কমলা রঙের ফল। ডুমুরের কাছাকাছি। ভালো করে খেয়াল করা দেখা গেল ডুমুর নয়। বয়সী বৃক্ষ। উচ্চতাও কম নয়। তবে ফলের জন্য এই গাছটি আলাদা মনে হলো। বৃক্ষ জুড়ে বড় বড় সবুজ পাতা।

বিশ্রামাগারের সীমানা ঘেঁষে চলে গেছে মাইনী বাজারের সড়ক। সড়কের উপর ঝরে পড়েছে প্রচুর ফল। হাতে নেওয়ার পর কৌতূহলী হলাম। অচেনা ফলের নাম কি? পাবলাখালীর চিরসবুজ বন ঘুরেও যে ফল দেখিনি, লোকালয় ঘেঁষা বাংলোর সীমানা ঘেঁষা তার দেখা মিলল। গাছের ডালে থোকায় থোকায় ধরে থাকা ফলের ছবি তুললাম।

গাছটির পরিচয় জানতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিগুলো দেওয়া হলো। স্থানীয় অনেকে সাড়া দিয়ে জানালেন, অগোয্য। বৃক্ষটির পরিচয় নিশ্চিত করে নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন জানালেন, এটি বনচালতা। তিনি বলেন, বনচালতা আমাদের দেশের দুর্লভ বৃক্ষ। এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। একই সাথে এটিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। একসময় শালবনে এটি ছিল। কিন্ত বর্তমানে বৃক্ষটি সেখানে আর দেখা যায় না। বনচালতা বানরসহ বিভিন্ন পশুপাখির প্রিয় খাবার। পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের আওতাধীন মাইনী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সজীব মজুমদার বলেন, বনচালতা গাছটির বয়স প্রায় শত বছর। ১৯২৭ সালে মাইনীতে আমাদের রেঞ্জ কর্মকর্তার বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়। এরও দশ বছর আগে থেকেই বনচালতার গাছটি সেখানে ছিল। এটি কেউ রোপণ করেনি। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নিয়েছে। সেই হিসেবে এই গাছের বয়স প্রায় একশ বছর। বনচালতা ধীরে বড় হয়। তাই এটির আকার দেখে বয়স বোঝা যাবে না।

স্থানীয় চাকমারা এটিকে অগোয্যা বলে। বনচালতার ফুল পাহাড়ের হাটগুলোতে বিক্রি করতে দেখা যায়। এটিকে সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। স্থানীয়রা এটিকে ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করেন বলে জানা গেছে। প্রাকৃিতকভাবে জন্ম নেওয়া বৃক্ষটির কাঠ মূল্যবান। স্থানীয়ভাবে এই গাছের কদর রয়েছে। বনচালতার ইংরেজি নাম ডগ টিক বা নেপালি এলিফ্যান্ট আপেল। বনচাতলা চালতারই সমশ্রেণী। এটি মূলত মাঝারি আকারের বৃক্ষ হলেও শতবর্ষী এই বনচালতা বেশ বড়। পাতা দেখতে চালতার মতো, খাঁজ কাটা।

বন বিভাগের কর্মীরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বর্ষার শুরু থেকে পুরো বৃক্ষটি পাতা আর ফুলে ভরে যায়। পুরো বর্ষা গাছে ফল থাকে। ফল মার্বেল সাইজের, কমলা হলুদ রঙে মোড়ানো। ফলের উপর হালকা ঢেউ থাকে। তবে বনচালতা খাওয়া যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও সিলেট ও টাঙ্গাইলে বনচালতা দেখা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁকখালী নদীতে মস্তকবিহীন লাশ
পরবর্তী নিবন্ধআজ ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে পুঁজিবাজারও