বান্দরবানের পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে টক ফলের। পাতা, আঁশ এবং ফল তিনটি অংশই ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় এই ফলের কদর বাড়ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। স্থানীয় পাহাড়িদের ভাষায় ফলটির নাম ‘আমিল্যে’। ভিটামিন সমৃদ্ধ ও ভেষজ এই ফল দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোজেলা, চুকাই, মেসতা নামে পরিচিত। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এক সময়ে দেশের সর্বত্র দেখা মিললেও এই উদ্ভিদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো এর চাষ হয়। জেলার সাতটি উপজেলায় পাহাড়ে জুম চাষের সাথী ফসল হিসেবে ‘আমিল্যে’ বা টক ফলের চাষ করে জুমিয়ারা। পাহাড়ি গ্রামগুলোতে অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনায়ও দেখা যায় টক ফলের গাছ। দেখতে খাটো ও ঝোপালো গাছ। ফুলের রং হলুদ, তবে মাঝের অংশ মেরুন রঙের। পাতা লালচে সবুজ, ফল লাল হয়। এটি ভিটামিন বি–৬ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ঠোঁটের কোণে ঘা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবে জ্বালা–পোড়া, চর্মরোগসহ নানা রোগের উপশম করে এটি। এছাড়াও ফলটি টক স্বাদের কারণে জ্যাম, সস, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় বাসিন্দার রিতা তঞ্চঙ্গ্যা ও সুপ্রিয়া ত্রিপুরা বলেন, টকপাতা ও টক ফলটি পাহাড়িদের পছন্দেরের একটি খাবার। পাড়ায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় এ গাছের চাষ হয়। মূলত পাহাড়ে জুম চাষে সাথী ফসল হিসেবে এটির উৎপাদন বেশি হয়। সপ্তাহে হাটবাজারের সময় বালাঘাটা বাজার এবং মধ্যমপাড়া মারমা বাজার থেকে ফল ও টকপাতা কিনতে পাওয়া যায়। দামও নাগালের মধ্যে হওয়ায় এ খাবারটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাহাড়িরা এই ফলের খোসা দিয়ে টক রান্না করে।
স্থানীয় টাইগার পাড়ার চাষি টাঙ্গুলি তঞ্চঙ্গ্যা ও রুমা সড়কের চাষি ইয়াংরি ম্রো বলেন, কয়েকবছর ধরে জুম চাষের সাথী ফসল হিসেবে তারা বাণিজ্যিকভাবে টক ফল চাষ করছেন। তবে কাঁচা নয়, এটি শুকিয়ে বিক্রি করছেন। পাইকারি দামে ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে চা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন। এ গাছটি চাষে খুব বেশি পানি লাগে না। বেশি রোদ দরকার হয়। বর্ষা ও শীত হচ্ছে এর প্রধান মৌসুম।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহনেয়াজ জানান, পাহাড়ে বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে রোজেলা ফলের। পাহাড় ও সমতলে সবশ্রেণীর পেশার মানুষ কিনে খাচ্ছেন এ ফল ও পাতা। এ গাছটির পাতা, আঁশ এবং ফল–তিনটি অংশই খাবার হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। জ্যাম, সস, জেলি বা আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় হাটবাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীও কিনে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানিদের সরবরাহের জন্য। এটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দিনদিন বাড়ছে পাহাড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আবহাওয়া রোজেলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।