ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ঠেকাতে এবং পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি রোধে পাহাড়ে সব অবৈধ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। ২০ জুন বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮তম সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৫ হাজার ৩০০টি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ দিয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এতে একটু বৈরি আবহাওয়াই সেখানে দেখা দিচ্ছে পাহাড় ধসের শঙ্কা। এদিকে পাহাড়ে কোনো অবৈধ গ্যাস আছে কিনা সেটি জানানোর জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিসট্রিভিউশন লিমিটেডের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেন বিভাগীয় কমিশনার। এ সংক্রান্তে ১৫ দিন পর পর তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেন তিনি। সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের ২৬টি পাহাড়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছি। কোনো অবস্থাতে পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ১০ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। গত এক বছরে শুধু মহানগরে ৫১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখান থেকে ১১টি পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে, ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের উখিয়ায় থাকা কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। তিনটি ক্যাম্পে অন্তত আট রোহিঙ্গাসহ ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। খবরে প্রকাশ, পাহাড়ে মানুষের প্রকৃতি–বিনাশী কর্মকাণ্ড ক্রমেই বাড়ছে। গাছ কেটে পাহাড়গুলোকে ন্যাড়া করে ফেলা হচ্ছে। ফলে প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটি ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। টানা বর্ষণে ওপরের মাটি আলগা হয়ে এসে পড়ছে নিচে থাকা ঘরবাড়ির ওপর। এতে প্রাণহানি ঘটছে।
চট্টগ্রামে প্রতিবছর কোনো না কোনো জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ঘটে প্রাণহানি। গত ১৩ বছরে পাহাড় ধসে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হলেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। টানা ভারী বৃষ্টিতেও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে অনেক পরিবার। তাদের সরানো হয় শুধু বর্ষা মৌসুমে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি স্থায়ী কোনও সমাধান না হয় তাহলে প্রাণহানি আরও বাড়বে। নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। জানা যায়, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা মানুষগুলো তাদের ঘরের মালিক নয়। স্বল্প ভাড়ায় তারা সেখানে বসবাসের সুযোগ পায়। পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রতিটি বস্তি কোনো না কোনো প্রভাবশালী গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যারা নিয়মিত ভাড়া আদায় করে। এই চক্রটির কারণে প্রশাসন চেষ্টা করেও পাহাড়ে বসতি বন্ধ করতে পারছে না। আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অপরিকল্পিত নগরীতে কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি পরিকল্পনা থাকতো তাহলে তাদের কোথাও স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া যেত। পাহাড়ধস বন্ধে বেশ কিছু পাহাড় সংরক্ষণ করে দেখা যেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল মত প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, পাহাড়গুলো আমাদের সম্পদ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায় না! ধারাবাহিকভাবে পাহাড়ের ক্ষতি করে চললে পাহাড়ও একসময় তার প্রতিশোধ নেবে। পাহাড়কে নিজেদের স্বার্থে কোনো গোষ্ঠী বা চক্র যেন ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচলিত যেসব আইন আছে সেসব আইনে যে শাস্তির বিধান বর্ণিত আছে তা আরও বৃদ্ধি করে এর সুপ্রয়োগ জোরদার করতে হবে। পাহাড় দখলকারীদের উচ্ছেদ করতে হলে যতটুকু জনবল বন বিভাগের থাকা উচিত সেসব বৃদ্ধিতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। জলবায়ুু পরিবর্তানের বিরূপ প্রভাবের হাত থেকে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড় ও গাছ কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্ষায় কোনো না কোনো সময় ভারি বর্ষণ হবেই। তবে তার সঙ্গে পাহাড় কাটা, বনের গাছপালা কেটে ফেলার ঘটনা যোগ হলেই এর খেসারত চরমভাবে দিতে হবে আমাদের। পাহাড়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও পাহাড় কাটা রোধ করা যাবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। পাহাড় ধ্বংসের কুফল সবাইকে বোঝাতে হবে। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা রোধে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।