পাহাড়ে কালো বিনির ভাপাপিঠা

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শনিবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের আমেজে গরম গরম ধোঁয়া উঠা পিঠার দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। জেলা শহরের চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়াম এলাকার ফুটপাতে ভাসমান দোকানে বিক্রি হয় কালো বিনি চালের তৈরি ভাপাপিঠা। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমে গরম ধোয়া ওঠা ভাপাপিঠার বেচাবিক্রি। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও বেশ চাহিদা রয়েছে পাহাড়ের জুমে উৎপাদিত কালো বিনি চালের তৈরি ভাপাপিঠার। পিঠা বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন পাহাড়ি নারীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ধোঁয়া ওঠা সুস্বাদু কালো বিনির ভাপাপিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন স্থানীয় বিভিন্ন বয়সী লোকজনসহ পর্যটকরা। প্রতিটি পিঠা বিক্রি হয় ২০ টাকায়। বিনি চালের ভাপাপিঠা ছাড়াও রয়েছেন বরা পিঠা, ম্যারা পিঠা (সাইন্নে পিঠা), কলা পিঠা, পাজন সহ মাছ ও মাংসের শিক কাবাব।

চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা আরাফাত নোমান বলেন, এ ধরনের পিঠা বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায় না। পাহাড়ের জুমের কালো বিনি চালের তৈরি ভাপাপিঠা খেতে খুব সুস্বাদু। আমরা দেখে খেতে আসছি, খুব ভালো লেগেছে এবং নিয়েও যাচ্ছি। স্থানীয় ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমরা প্রায় সময় মাঠে খেলা শেষ করে সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে এখানে গরম গরম কালো বিনি চালের ভাপাপিঠা খেতে আছি। খুব ভালো লাগে। একদম ফ্রেশ খাবার দামও কম। খাবারের মানও ভালো।

মঙ্গল কুমার চাকমা নামে আরেকজন বলেন, বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছি, এখানে এসে দেখি গরম গরম কালো বিনি চালের তৈরি ভাপাপিঠা বানানো হচ্ছে। তাই দেখে খেতে আসলাম। জুমের কালো বিনি চাল দিয়ে তৈরি, তাই যে কেউ খেয়ে মজা পাবে। দামেও কম, মাত্র বিশ টাকা। আমি নিজেও দুটি খেয়েছি আর বাড়িতে স্ত্রী আর নাতিদের জন্য নিচ্ছি।

ভাপাপিঠা বিক্রেতা গৌরিকা চাকমা বলেন, আমরা কালো বিনি চালগুলো ব্যবসায়ীদের থেকে কিনে থাকি। দুজনে মিলে এখানে বিকেল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাপাপিঠা বিক্রি করি। সন্ধ্যায় পিঠা খাওয়ার জন্য ভিড় জমে। এখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের পর্যটকরাও আসে পিঠা খেতে। অন্যান্য পিঠার চাইতে কালো বিনি চালের তৈরি ভাপাপিঠার চাহিদাটা বেশি সবার। একেকটা পিঠা বিশ টাকা করে বিক্রি করি। এভাবে দৈনিক বেচাকেনার ওপর নির্ভর করে দুই হতে তিন হাজার টাকা আয় হয়। এতে করে আমরাও আর্থিকভাবে কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারছি।

আরেক পিঠা বিক্রেতা পরানি চাকমা বলেন, আমি তিন বছর ধরে শীতের মৌসুমে এখানে পিঠা বিক্রি করছি। এতে পরিবারেরও কিছুটা আয় হচ্ছে। মূলত কালো বিনি চালগুলো গুঁড়ো করে, নারিকেল ও গুঁড় দিয়ে এই ভাপাপিঠা তৈরি করি। সবার আর্কষণ থাকে কালো বিনি চালের ভাপাপিঠার প্রতি। তাই এই পিঠার চাহিদাও রয়েছে বেশ। বিকেল গড়ার সাথে সাথে এখানে পিঠা খাওয়ার ভিড় জমে। দৈনিক কখনো দুই হাজার আবার কখনো চার টাকার পর্যন্ত এই ভাপাপিঠা বিক্রি হয়। এতে অন্যান্য খরচগুলো বাদ দিয়ে লাভ থাকে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা সাধারণত এ ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে লোনের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকে সুপারিশের ব্যবস্থা করতে পারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ বছরে ২৮০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে : ফখরুল