পাহাড়ে আবাদি জমি কমলেও বাড়ছে কাঁঠাল উৎপাদন

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শনিবার , ১০ মে, ২০২৫ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফল হিসেবে পরিচিত কাঁঠাল উৎপাদনের দিক থেকে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। জাতীয় ফল কাঁঠাল উৎপাদনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন পাহাড়ি জেলার সুখ্যাতি পুরনো। পাহাড়ে কাঁঠালের উৎপাদনও ক্রমবর্ধমান। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঢালু পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির মৌসুমি ফলের সঙ্গে রয়েছে ছোটবড় হাজারো কাঁঠাল বাগান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হচ্ছে বান্দরবানে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে কাঁঠাল উৎপাদন সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে বান্দরবান। এরপর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার অবস্থান। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের বিগত ৫ বছরের আবাদ ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে কাঁঠালের আবাদ ভূমি কমলেও ফলন উৎপাদন বেড়েছে।

মূলত বছরের এপ্রিল মাস অর্থাৎ গ্রীষ্মের শুরু থেকেই পার্বত্য অঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে পাকা কাঁঠাল আসতে শুরু করে। সাপ্তাহিক হাটবার ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাজারে কাঁঠাল আনছেন স্থানীয় চাষীরা। এসব কাঁঠাল বাজার থেকে পাইকার দরে কিনছেন ঢাকাচট্টগ্রামের পাইকারি ক্রেতারা। এরপর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

রাঙামাটি জেলা শহরে অবস্থিত মৌসুমি ফলের বাণিজ্যিক কেন্দ্র বনরূপা সমতাঘাট, পৌর ট্রাক টার্নিমালে কাপ্তাই হ্রদ দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পরিবহন করে কাঁঠাল বাজারে আনছেন চাষীরা। তবে হাটবারে বেশি আনা হয় এই মৌসুমি ফল। এছাড়া জেলার কুতুকছড়ি, ঘিলাছড়ি, ঘাগড়া, কাউখালী, কাপ্তাই, বাঙালহালিয়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে ক্রমাগত বাড়ছে মৌসুমি ফল কাঁঠালের উপস্থিতি। এটি প্রায় আষাঢ় পর্যন্ত থাকবে বলছেন ক্রেতাবিক্রেতারা। বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির প্রধান হাটবাজারগুলো এখন কাঁঠালে সয়লাব।

সমপ্রতি রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি বাজারে গিয়ে সরেজমিন দেখা যায়, রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নসহ নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে পাহাড়ি কৃষকরা বাজারে বিক্রয়ের জন্য এনেছেন। তাদের থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা এসব কাঁঠাল ক্রয় করবেন। কৃষকরা জানান, পাহাড়ের কাঁঠাল বাগানগুলোতে কাঁঠাল বিক্রয় উপযোগী হয়ে উঠেছে। কৃষকরা বাজারে কাঁঠাল এনে বিক্রয় শুরু করছেন। এটি আষাঢ় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার মাটি কাঁঠাল আবাদের উপযোগী। এছাড়া তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার ঢালু পাহাড়ে সব ধরনের ফসল উৎপাদন করা যায়। ঢালু পাহাড়ে কাঁঠাল চাষ সহজলভ্য। সে কারণে অন্যান্য ফলন থেকে কাঁঠাল আবাদ সহজ ও খরচ দিক থেকেও সাশ্রয়ী।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯২০ অর্থবছরে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৯ হাজার ৪৪২ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন। ২০২০২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪০৯ হেক্টরের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০১ মেট্রিক টন। ২০২১২২ অর্থবছরে ৯ হাজার ১৬০ হেক্টরের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৬৫৯ মেট্রিক টন। ২০২২২৩ অর্থবছরে ৮ হাজার ৪৪২ হেক্টরের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। সবশেষ ২০২৩২৪ অর্থবছরে ৮ হাজার ৩৮৭ হেক্টরের বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭০ টাকা। তবে চলতি বছরে কাঁঠালের মৌসুম মাত্র শুরু হওয়ায় এখনো ফলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি কৃষি বিভাগ। তবে কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা, এবারও কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বান্দরবান কার্যালয়ের উপপরিচালক এমএম শাহ নেওয়াজ বলেন, বান্দরবান জেলার সব উপজেলাতেই কমবেশি কাঁঠাল আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বাজারে কাঁঠাল আসা শুরু হয়েছে। তবে পুরো জেলার মধ্যে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় কাঁঠাল উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। লামা, আলীকদমের দিকে তুলনামূলক কম উৎপাদন হয়ে থাকে। লামা, আলীকদমের দিকে সমতল ভূমি বেশি থাকায় সেসব এলাকায় অন্যান্য ফসলের চাষ হয়, সেজন্য কাঁঠাল উৎপাদন কিছুটা কম হয়।

ডিএই রাঙামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কৃষিবিদ মো. নাসিম হায়দার বলেন, কৃষকরা এখন আগে থেকে অনেক সচেতন। কীভাবে চাষাবাদ ও পরিচর্যা করতে হয়, সেগুলো এখন তারা ভালোভাবে শিখে গেছেন। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবানে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়ে থাকে। বান্দরবানে ক্রমাগত কাঁঠাল বাগান বাড়ছে এবং ফলনও বাড়ছে। বান্দরবানের কাঁঠালের একটা বড় অংশই সেখানে বেড়াতে পর্যটকরা ক্রয় করে থাকেন। উৎপাদন বাড়লেও বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা পড়ায় এর প্রভাব কিছুটা বিপণনেও দেখা দিতে পারে।

কৃষিবিদ নাসিম হায়দার আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণত দুই ধরণের কাঁঠাল গাছ চাষ হচ্ছে। একটি হলো গালা; আরেকটি হলো খাঁজা। তবে আসামি নামের আরেকটি প্রজাতি আছে। সেটি একদম শেষদিকের বাজারে আসে, আষাঢ়শ্রাবণ মাসে পেকে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআ. লীগ নিষিদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘মার্চ টু ঢাকা’ : নাহিদ
পরবর্তী নিবন্ধছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক সেমিনারে তারুণ্যের মেলা