বিবর্ণতার সময় পেরিয়ে এখন সবুজ পাহাড়। আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রাবণ বা বর্ষা আসতে আরো তিন সপ্তাহ বাকি। তবে এক মাসের বেশি সময় ধরে পাহাড়ে অনিয়মিতভাবে ঝরছে বৃষ্টি। বৃষ্টি সময়ে পাহাড় তার মৌলিক রূপ ফিরে পায়। খাগড়াছড়ির সবুজ পাহাড়ে ফুটেছে জাকারান্ডা। নীল রং। অশেষ মুগ্ধতা। খাগড়াছড়ি–চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে জাকারান্ডার সম্ভাষণ। নিসর্গপ্রেমীদের কাছে চেনা হলেও সড়কের দুই পাশে ফুটে থাকা এই নতুন ফুল নিয়ে অনেকের কৌতুহল রয়েছে। আগে স্বল্প পরিমাণে ফুটলেও এবার বেশ কয়েকটি গাছে জাকারান্ডা ফুটেছে।
খাগড়াছড়িতে পাঁচ বছর আগে নীল জাকারান্ডার আগমন ঘটে। ২০২০ সালে খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগের তৎকালীন উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা পরিবেশবান্ধব অনিন্দ্য সুন্দর জাকারান্ডার রোপণের উদ্যোগ নেন। চারা সংগ্রহ করার পর খাগড়াছড়ি–চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রাথমিকভাবে ১ হাজার চারা রোপণ করেন। সড়কর দুই ধারে জিরো মাইল থেকে ব্যাঙমারা পর্যন্ত এসব চারা রোপণ করা হয়। ২০২৩ সালে গুটিকয়েক গাছে ফুল আসে। এরপর গতবছর বেশ কিছু গাছে ফুল আসে। চলতি বছর মে মাসের শুরু থেকে জাকারান্ডা ফুটতে শুরু করেছে।
জাকারান্ডার রঙে মুগ্ধ পথিকও। খাগড়াছড়ি–চট্টগ্রাম সড়কে ফুটে থাকা জাকারান্ডা নিয়ে চলাচলকারীদের কয়েকজন মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। নন্দিতা বড়ুয়া নামে একজন জানান, এই ফুলটা চেনা ছিল না। প্রথম বার দেখলাম। পরে এটার নাম জেনেছি জাকারান্ডা। বেশ সুন্দর ফুল। গাছ অনেকটা কৃষ্ণচূড়ার মতো। থোকায় থোকায় নীলরঙের ফুল অসাধারণ। চাকরির সুবাদে এই পথে প্রায় যাতায়াত করতে হয়। নীল জাকারান্ডা দেখে অসাধারণ লাগে। আরেক পথচারী শোভন মাহমুদ বলেন, আলুটিলা সড়কের বাঁকে বাঁকে বেশ কিছু জাকারান্ডায় ফুল এসেছে। এবারই চোখে পড়ল। পাহাড়ের নতুন ফুল। এর আগে এটি কখনো দেখা যায়নি। গাছগুলো বড় হলে ছায়াও দিবে। জাকারান্ডা ফুল খুবই সুন্দর। ফুলের নীল রঙের ছটা বাড়তি মুগ্ধতা তৈরি করেছে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক নীলিমা রায় বলেন, পাহাড়ে এসে জাকারান্ডা দেখব এটা ভাবিনি। আলুটিলা থেকে ফেরার পথে নীল জাকারান্ডা দেখে গাড়ি থামিয়েছি। কিছু কিছু গাছে বেশ ঝাঁকিয়ে ফুল ফুটেছে। এতো সুন্দর ফুল বাংলাদেশের এই পাহাড়ি জেলায় ফুটেছে। যারা এমন উদ্যোগ নিয়েছে সত্যিই প্রশংসনীয়। সড়কের দুই ধারে হওয়ায় এটির সৌন্দর্য সবাই উপভোগ করতে পারবে।
সবুজ চাকমা বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, জাকারান্ডা বিরল প্রজাতির হলেও অনেক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় এটি পাওয়া যায়। খাগড়াছড়িতে সড়কের পাশে এর চারা রোপণের উদ্যোগ নিই। এটি মূলত পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ। এই ফুলের প্রচুর সুগন্ধী। ২০২০ সালে খাগড়াছড়ি–চট্টগ্রাম সড়কে ১ হাজার চারা রোপণ করি। ২০২৩ সালে জালিয়াপাড়া সিন্দুকছড়ি সড়কের মহালছড়ি থেকে পঙ্গীমুড়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দূরত্বে ৩ হাজার জাকারান্ডার চারা রোপণ করা হয়। জাকারান্ডা অত্যন্ত নান্দনিক। এর কাঠ মূল্যবান এবং সুগন্ধিযুক্ত। বিভিন্ন দেশে সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য সড়কের দুই পাশে লাগানো হয়ে থাকে।
হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাথোয়াই মারাম বলেন, খাগড়াছড়িতে জাকারান্ডা ফুটেছে এটা দারুণ ব্যাপার। পাহাড়ের প্রকৃতিতে নতুন একটা প্রজাতির ফুল যুক্ত হয়েছে। আলুটিলা সড়কের বিভিন্ন অংশে নীল রঙের মুগ্ধতা এখন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাকারান্ডা রয়েছে। তবে সবগুলো গাছে একসাথে ফুল ফুটলে আরো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে।