খাগড়াছড়ির পাহাড়ি বনে দেখা মিলেছে হরিয়াল পাখির সবচেয়ে দুর্লভ প্রজাতি গেঁজলেজ হরিয়াল। সম্প্রতি জেলার দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের এক পাহাড়ি বনে পাখির দেখা পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রতিবেদক ঐ বনে পাখির ছবি তুলে আসছিলেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার প্রথম পাখিটির দেখা পায়।
বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রীদের ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ ‘বার্ডস বাংলাদেশ’ এ দেখা যায়, এর আগে হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, বান্দরবানে এই পাখিটি দেখা গেছে। তবে খাগড়াছড়ির বনে এই প্রথম গেঁজলেজ হরিয়ালের সন্ধান পাওয়া গেল। পাতাঝরা ফাইশ্যা উদাল গাছের ডালে একসাথে প্রায় ৬টি হরিয়াল বসে আসে। এর মধ্যে চারটি গেঁজলেজ অন্য দুটি কমলাবুক হরিয়াল। কেবল গেঁজলেজ হরিয়ালই নয়, বাংলাদেশের যে ছয় প্রজাতির হরিয়াল পাওয়া যায় তার সব প্রজাতিই এই বনে রয়েছে। এর আগে হলদে পা হরিয়াল, ল্যাঞ্জা হরিয়াল ছোট হরিয়াল, ঠোঁট মোটা হরিয়াল, কমলাবুক হরিয়াল দেখা গেছে।
বায়োাডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির সংগঠক সবুজ চাকমা বলেন, আমাদের দেশের যে হরিয়াল সবচেয়ে কম দেখা যায় সেটি হল গেঁজলেজ হরিয়াল। পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিশেষত দুর্লভ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল বলা যায়। পাখির খাবার উপযোগী বৃক্ষ ও আবাসস্থল থাকায় এখানে হরিয়াল, লাল মাথা কুচকুচিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি প্রায় চোখে পড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের যত প্রজাতির পাখি রয়েছে তার বেশির ভাগই এখানে পাওয়া যায়। গেঁজলেজ হরিয়াল দুর্লভ পাখি।
গেঁজলেজ হরিয়ালের পালকে মেরুন রঙ রয়েছে। এছাড়া তাদের মাথার উপর হলুদ দাগ রয়েছে। তাদের পায়ের রঙ লালচে। চোখের চারপাশে সাদা বৃত্ত রয়েছে। চঞ্চু কিছুটা বাঁকানো। বুকে হলদে ভাব রয়েছে। শান্ত স্বভাবের হয়িাল সবসময় দলবদ্ধভাবে থাকে। বনশিমুল, উদাল, বট, ভাদি, মান্দার, মেহগনিসহ বিভিন্ন বৃক্ষে এদের বিচরণ বেশি। এরা মূলত বৃক্ষচারী পাখি।
পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা মাহফুজ রাসেল বলেন, গেঁজলেজ হরিয়াল বেশ বিরল পাখি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব এলাকায় এখনো প্রাকৃতিক বন ঠিকে রয়েছে সেখানে কিন্ত পাখি দেখা যায়। নির্বিচারে বন ধ্বংসের কারণে সাম্প্রতিককালে পাখিসহ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনভাবে বনে আগুন দেয়া যায় দেখা অনেক ছোট কীটপতক্ষ, পাখির আবাসস্থল পুড়ে যাচ্ছে। বন রক্ষার পাশাপাশি বনায়ন সম্প্রসারণ করা গেলে এখানে পাখিসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের সম্ভাবনা আরো বাড়বে।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, খাগড়াছড়ি পাখিসহ বন্যপ্রাণীর অন্যতম হটস্পট। এখানে যাতে কেউ বন্যপ্রাণী বা পাখি শিকার করতে না পারে সেজন্য বেশ তৎপর রয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণীর উপযোগী বনায়নের জন্য আমরা দেশীয় চিরসবুজ প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের উপর জোর দিচ্ছি। হরিয়ালের প্রজাতি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে সংরক্ষিত প্রজাতি।