ও মাতাল সুরে বাজলো বাঁশি, মন জুড়ে আজ মধুর হাসি, আজ পাহাড়ে লাগলো খুশির ধুম, লাগে দোল মহুয়া ফুলে, দক্ষিণায় দুলে দুলে ফসলে ভরে আছে ঝুম, ও রঙিন প্রজাপতি কি খুঁজিছ গীতিনীতি, এ ফুলে ও ফুলে তোর মাতামাতি, কবে যাব পাহাড়ে আহারে আহারে। পাহাড়ে কত নাম না জানা ফুল ফোটে যার আবেদন চিরন্তন। পাহাড়ের অপূর্ব এক ফুল বিজু ফুল। ঘন ঝোপের মাঝে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকা থোকা ফুটে এই ফুল। মৃদু সুগন্ধে মন কেড়ে নেয়। প্রতিটি শাখার অগ্রভাগে থোকা থোকা ফুল ফোটে। উর্ধ্বমুখী মঞ্জরীগুলো হালকা সাদা আর গোলাপি। ফুল আকারে নলাকৃতির। প্রতিটি ফুলের পাপড়ি থাকে চারটি। ফুটন্ত ফুল অনেকদিন স্থায়ী থাকে। চৈত্র মাসে বিজু ফুল ফুটলেই পাহাড়ে উৎসবের আমেজ দেখা যায় ঝোপঝাড় থেকে বিজু পেক্কো ( বিজু পাখি) বিজু বিজু বলে ডেকে ওঠে তখন। শুরু হয় কোমর তাঁতের ছন্দময় ব্যস্ততা। হাদি আর পিনন বুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। আর জুম বোনার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় জুমিয়াদের। পাজন (পাচন) আর চোয়ানির (পানীয়) উপকরণ জোগাড় চলতে থাকে বাড়িতে।
বিজু–বৈসুক– সাংগ্রাই– বিহু (বৈসাবি) সমপ্রদায়ভেদে উৎসবের নাম ভিন্ন কিন্তু তার রূপ বা চেহারায় সেই ভিন্নতা নেই। বিজু ফুলের নামের ক্ষেত্রেও তাই। চাকমারা যাকে বলে ভাতজোড়া, এিপুরাদের কাছে তাই ‘কুকুইবোবা’ আর তবে মারমারা সেটাকে ডাকে ‘চাইগ্রাইটেং’ ফুল বলে। তবে পাহারে বসবাসরত বাঙালিরা এই ফুলকে ভিউফুল বলে।
রঙ্গন ফুলের মতো থোকায় ফোটে এই পাহাড়ি ফুল। সাদার মাঝে ঈষৎ গোলাপি আভা নিয়ে প্রকাশ তার। দেখলেই হাত বাড়াতে ইচ্ছে হয়। এমন অনিন্দ্যসুন্দর ফুল আর কোথায় মেলে। বিজু–বৈসুক–সাংগ্রাই– বিহু উৎসবকে এই ফুল ছাড়া কল্পনা করা যায়না। চাকমা সমপ্রদায়ের বিজু উৎসবের মতই আর সব পাহাড়ি সমপ্রদায়ের উৎসবও তিনদিনের। চাকমাদের কাছে এ ফুল বিজু, মূল বিজু আর গজ্জেগজ্জে বিজু নামে পরিচিত। গঙ্গায় বা নদীতে বিজু ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়।ঘরেও তার পবিত্র উপস্িহতি থাকে তখন। বিজু ফুল ছাড়া ঘরে উৎসবের মেজাজই আসেনা। চাকমাদের প্রচলিত বিশ্বাস, বিজুর দিন এই ফুলের ঘ্রান নিলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অনেক ফুলের মত এটিও এখন হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড় থেকে। ফুল শুধু উৎসবে নয় যেকোন আসরে সভামঞ্চে, শুভকামনায়, নিবেদনের অন্যতম অনুসঙ্গ। আর উপহারেতো শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করে ফুল।