পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেল ধোপাছড়ি খালের সেতু

আপাতত পারাপার চলবে নৌকায়

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৩ মে, ২০২৫ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

টানা প্রবল বর্ষণে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেল চন্দনাইশের দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ধোপাছড়ি খালের ওপর নির্মিত কাঠের সেতুটি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে পাহাড়ি অঞ্চলটিতে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে। যা অবিরাম চলে বিকেল পর্যন্ত। প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল ধোপাছড়ি খাল হয়ে পড়ে খরস্রোতা শঙ্খ নদীতে। ঢলের তীব্রতায় বিকেল ৩টার দিকে সেতুর মাঝখান ভেঙে যায়। তবে এসময় সেতুর উপর কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধোপাছড়িবাসীর স্বপ্নের কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে এ ইউনিয়নের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের।

স্থানীয়ভাবে জনা যায়, ধোপাছড়ি ইউনিয়নটি নদ, পাহাড়, সমতলের সংমিশ্রণ হওয়ায় পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই ইউনিয়নে যুগ যুগ ধরে একসাথে বসবাস করে আসছে বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন। সড়ক যোগাযোগের অপ্রতুলতায় ইউনিয়নটি পিছিয়ে রয়েছে। ধোপাছড়ি ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধোপাছড়ি খালের জলধারা এই ইউনিয়নের মানুষকে দুইভাগে বিভক্ত করে রেখেছে যুগের পর যুগ। পাহাড় থেকে সৃষ্টি হয়ে খালটি মিশেছে খরস্রোতা শঙ্খ নদীর সাথে। খালটি দিয়ে প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র গতিতে প্রবেশ করে শঙ্খ নদীতে। বাঁশের সাঁকোতেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে খালটি পারাপার করতে হতো ইউনিয়নের ১ নম্বর ও ২ নম্বর ওয়ার্ড শঙ্খকুল, চেমিরমুখ এলাকার প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবারসহ দুই পাড়ের মানুষকে। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি একটি স্থায়ী সেতু। এই খালে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের ব্যাপারে অনেকবার সমীক্ষাও হয়। কিন্তু নানা জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে স্থায়ী সেতু নির্মাণ হয়নি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের দিকে চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ থেকে ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ১০০ মিটার লম্বা ও ৭ ফুট প্রস্থের একটি দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই সেতুটি দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপারসহ মোটর সাইকেল, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি রিকশা, টমটমসহ ছোট ছোট যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। অবশেষে কাঠের সেতুতেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুশি হয়েছিল ধোপাছড়ির বাসিন্দারা। কিন্তু ধোপাছড়িবাসীর দুঃখ যেন শেষ হবার নয়। গতকাল বৃহস্পতিবারের অবিরাম বর্ষণে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে স্বপ্নের সেতুটির মাঝখানে ভেঙে যায়। এতে আবারো সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শঙ্খকুল ও চেমিরমুখ এলাকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাই বেশি ভোগান্তির শিকার হবেন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পাহাড়ি ঢলের সাথে ভেসে আসা একটি বিশাল বাঁশের চালির ধাক্কায় সেতুর একাংশ ভেঙে পড়েছিল। তখন মেরামত করে পুনরায় সেতুটি সচল করা হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাজিব হোসেন জানান, ধোপাছড়ি খালের উপর নির্মিত কাঠের সেতুটির মধ্যখানে ভেঙে যাওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি ইতিমধ্যে পিআইও অফিসারের সাথে কথা বলেছেন। আপাতত পূর্বের মতোই নৌকা করে মানুষ পারাপারের ব্যবস্থা করা হবে এবং পরবর্তীতে সেতুটি মেরামত করে পুনরায় চলাচল উপযোগী করে তোলা হবে। ধোপাছড়ি খালের উপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডির পর উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেয়া যায় কিনা তা দেখবেন বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষার আগেই ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে মাইক্রোবাস উল্টে গিয়ে বিলে, যুবকের মৃত্যু