ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে সুফল পেতে পাহাড়তলী–ষোলশহর হয়ে দোহাজারী পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার মিটারগেজ (এমজি) রেলপথকে ডুয়েলগেজে উন্নীত করার কাজ শুরু হচ্ছে চলতি বছর। নবনির্মিত দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথের সাথে সঙ্গতি রেখে এই পথ ডুয়েলগেজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন রয়েছে ৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আর এডিবির ঋণ রয়েছে ৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত ১০১ কিলোমিটার রেলপথটি সিঙ্গেল ট্র্যাক ডুয়েলগেজে নির্মিত। অপরদিকে দোহাজারী থেকে নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলপথটি মিটারগেজে নির্মিত। এই রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করতে উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। ঢাকা–কক্সবাজার সরাসারি ট্রেন চলাচলের সুফল পেতে পাহাড়তলী–দোহাজারী রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করা জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এই কারণে রেল কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। চলতি বছরে প্রকল্পের টেন্ডার হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি ট্রেন চলাচলে সুফল পেতে পাহাড়তলী–ষোলশহর হয়ে দোহাজারী পর্যন্ত মিটারগেজ (এমজি) রেললাইনকে ডুয়েলগেজে উন্নীত করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার উপরে। এই প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন রয়েছে ৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকার উপরে। আর প্রকল্পে এডিবির ঋণ রয়েছে ৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প থেকে এডিবির ৪ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়ে গেছে। ওই টাকা এডিবি ফেরত নেবে। এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে এডিবি ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে। এ বছর প্রকল্পের টেন্ডার হলেও কাজ শেষ হতে ২৬ সাল পর্যন্ত লাগবে।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়তলীর ঝাউতলায় বাইপাস নির্মাণ করা হলে এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যে ট্রেনগুলো চলাচল করে সেগুলোকে আর চট্টগ্রাম স্টেশনে প্রবেশ করে অতিরিক্ত সময় অপচয় করতে হবে না। তখন ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী সকল ট্রেন সরাসরি ঢাকা থেকে পাহাড়তলী হয়ে ঝাউতলা ও ষোলশহর দিয়ে কক্সবাজার চলে যেতে পারবে। এতে এক ঘণ্টা রানিং টাইম সাশ্রয় হবে। ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ষোলশহর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উচ্চগতির ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়াও ঢাকা ও সিলেট এলাকা থেকে উচ্চগতির ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের গোমদন্ডী–দোহাজারী মেইনলাইন রেলপথ ২৯ দশমিক ৩২ কিলোমিটার, পাহাড়তলী–ঝাউতলা বাইপাস রেলপথ ডুয়েলগেজ ডবল ট্র্যাক ৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, লুপ ও অন্যান্য লাইন ১০ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারসহ মোট ৬২ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার ট্র্যাককে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর ও নতুন করে নির্মাণ। ষোলশহর থেকে কালুরঘাট ব্রিজের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডবল ট্র্যাক নির্মাণ ১৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার, পাঁচটি স্টেশন (পাহাড়তলী, ষোলশহর, পটিয়া, কাঞ্চননগর ও দোহাজারী) কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলকিং (সিবিআই) সিগন্যাল ও ইন্টারলকিং পদ্ধতি চালু করা; তিনটি স্টেশন ভবন (পাহাড়তলী, ষোলশহর ও ঝাউতলা) পুনঃনির্মাণ এবং ১৪টি স্টেশন ভবনের সংস্কারকাজ।
প্রকল্পের মধ্যে ২০টি মেজর এবং ৬৮টি মাইনর ব্রিজ পুনঃনির্মাণ রয়েছে। এছাড়া প্রকল্পে তিনটি রেল ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই প্রকল্পের মধ্যে ৩০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভও সংগ্রহ হবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।