পাহাড়, নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত সবুজ চট্টগ্রাম শহরের প্রকৃতিক সৌন্দর্যকে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। এখনো নির্বিচারে গাছ কাটা, পাহাড় কাটা চলছে। চট্টগ্রামের উপরিভাগের জলে লবণাক্ততার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় শুকনো মৌসুমে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে জনজীবনে ভয়াবহ স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় নেমে আসবে। গাছ তো লাগানো যায়, কিন্তু পাহাড় সৃষ্টি করা যায় না। পাহাড় আমাদের জন্য পানি সংরক্ষণ করে। তার থেকেই ঝিরি, ঝরনা, নদী উৎপন্ন হয়। সেই জলপ্রবাহই গড়ে তোলে সভ্যতা। কাজেই সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে পাহাড়কে বাঁচাতে হবে।
বিশ্ব অরণ্য দিবস উপলক্ষে মীরসরাইয়ের ‘সোনাপাহাড়’ এর উদ্যোগে ‘চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিসর্গ সংরক্ষণ’ বিষয়ক মুক্ত আলোচনা গত ২১ মার্চ নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। এতে সোনাপাহাড়ের উদ্যোক্তা আমজাদ হোসেন বলেন, নির্বিচার পাহাড় কাটা, পুকুর ভরাট, গাছ কাটার ফলে নিসর্গ নগরী চট্টগ্রাম শহর ইট–পাথরের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। একে বাঁচাতে হলে দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি নেচার ক্লাব গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের অনেক স্থানের নামের সাথে পাহাড় জড়িয়ে আছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় সেখানে এখন আর কোনো পাহাড় নেই। নদীকে বাঁচাতে হবে, গাছকে বাঁচাতে হবে, গাছ লাগাতে হবে। বনভূমির পরিমাণ বাড়াতে হবে। আজকে গভীর সমুদ্রে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। মাছের বদলে উঠে আসছে পলিথিন। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে পরিবেশ সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় ও সচেষ্ট হতে হবে। কর্ণফুলী, হালদাসহ সকল নদী ও বঙ্গোপসাগরকে দূষণমুক্ত করার জন্য কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। স্কুল পর্যায় থেকে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা ও সংবেদনশীলতার শিক্ষা দিতে হবে। না হয় এই বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। আলোচনায় ‘কম ভোগ কম বর্জ্য’ নীতির কথাও উঠে আসে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, ‘প্রকৃতি’ সম্পাদক মুশফিক হোসাইন, কবি ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স প্রোগ্রামের ডিরেক্টর পি. মোজে সিলভাকুমার, কবি রিমঝিম আহমেদ, ভাস্কর অলক রায়, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের সাথে সংশ্লিষ্ট হাসিবুল ইসলাম শামীম, বৃক্ষকন্যা রিতু পারভী, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী আবু সুফিয়ান রাশেদ, ডা. মনজুরুল করিম বিপ্লব, সাংবাদিক ইকবাল হোসেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক মোহিত উল আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থপতি সোহেল শাকুর, বেসিক ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক ফয়সাল কোরেশী, ব্যবসায়ী ফরিদ আহম্মদ, প্রাক্তন ব্যাংকার ফরহাদ আজাদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক জাহেদ মোতালেব, গল্পকার শোয়ায়েব মুহামদ, দোতরাশিল্পী পরাগ ও পায়েল। স্বাগত বক্তব্য দেন কবি পুলক পাল।