চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের অতিরিক্ত চাপ ও বহিরাগতদের অবারিত প্রবেশ ঠেকাতে দর্শনার্থী পাস কার্ড চালু করা হচ্ছে। আগামী শনিবার থেকে একটি পাস কার্ডের বিপরীতে ওয়ার্ডে একজন রোগীর স্বজন বা দর্শনার্থী অবস্থান করতে পারবেন।যদিও চমেক হাসপাতালে এই পাস কার্ড প্রথা বিভিন্ন সময় চালু ছিল। এরমধ্যে বিনা নোটিশে বিভিন্ন সময় সেই প্রথা তুলেও নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি চমেক হাসপাতালে নতুন পরিচালক যোগ দেয়ার পর তিনি দর্শনার্থীদের সীমিত প্রবেশের ওপর জোর দিয়ে আবার পাস কার্ড চালুর উদ্যোগ নেন। একজন রোগীর বিপরীতে একটি পাস কার্ড দেয়া হবে। কার্ডের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকায়। তবে সেই কার্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দর্শনার্থীরা পুনরায় জমা দিয়ে পুরো টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চমেক হাসপাতালে ওয়ার্ড আছে ৬০টি। এসব ওয়ার্ডে মোট অনুমোদিত শয্যা রয়েছে ২ হাজার ২০০টি। তবে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকে। চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলা, ফেনীসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার অন্তত ৪ কোটি মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। রোগীর চাপ বাড়ার কারণে রোগীর স্বজনদেরও চাপ বাড়ে। এতে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল–ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষে দালাল চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া অনেক রোগীর সাথে প্রতারণা করার অভিযোগও পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দালালদের আটকও করে। এছাড়া হাসপাতালের ওয়ার্ডের করিডোরে রোগীর স্বজনদের মোবাইল ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা যেন নিত্যনৈমিত্তিক। হাসপাতালে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সীমিত করা সম্ভব হলে এসব ঘটনাও কমে যাবে। একইসাথে চিকিৎসকরাও রোগীদের নির্বিঘ্নে সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের তিনটি মেডিসিন ওয়ার্ড, হৃদরোগ ওয়ার্ড, নিউরোলজি ওয়ার্ড, নিউরো সার্জারি ওয়ার্ড, শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ড, সার্জারি ওয়ার্ড, অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড, ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড ও নবজাতক ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সব সময়ই বেশি থাকে। এর বাইরে আইসিইউ, সিসিইউ ও এনআইসিইউ’তে রোগীর চাপ থাকে। এসব ওয়ার্ডে বেশিরভাগ সময় একজন রোগীর বিপরীতে ওয়ার্ডের ভিতরেই ২–৩ জন দর্শনার্থী অবস্থান নেন। অনিয়ন্ত্রিত দর্শনার্থী প্রায়শ চিকিৎসকদের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেন। মূলত সেই চিন্তা থেকেই হাসপাতালে প্রবেশে পুনরায় পাস কার্ড প্রথা চালু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, হাসপাতালে এমনিতেই ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী থাকে। এখন যদি প্রত্যেক রোগীর সাথে দুইজন করে তাদের স্বজনরা থাকে, তাহলে সংখ্যাটা কিন্তু তিনগুণ বেড়ে যায়। এতদিন হাসপাতালে প্রবেশে কোনো ধরনের বাঁধা না থাকায় অনেক ওয়ার্ডে মোবাইল চোর, নবজাতক চোর ও দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ পাচ্ছিলাম। তাই আমরা সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশে পাস কার্ড চালু করা উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী শনিবার থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। ওয়ার্ডে এখন থেকে কেউ কার্ড ছাড়া অবস্থান করতে পারবেন না। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার–পুলিশ নিয়মিত বিষয়টি তদারকি করবে।