পাস করানোর দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করে আন্দোলনে করেছে সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে বোর্ডের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ সময় বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গতকাল রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বোর্ডের সামনে অবস্থান করে। এ সময় দাবি মেনে নেওয়া না হলে সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় তারা। আন্দোলনে পাস করা শিক্ষার্থীদেরও অংশ নিতে দেখা গেছে। তাদের দাবি, পরীক্ষায় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম। আন্দোলনে বোর্ড কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। খাওয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে সেবা নিতে এসেও ফিরে গেছেন। ঘটনাস্থলে সকাল থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তারা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনোভাবেই বুঝতে চাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তাদের একটাই দাবি, তাদের পাস করাতে হবে।
পরীক্ষার ফলাফলে তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে দাবি করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, আমাদের যে ফলাফল দেওয়া হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে। আমাদের দাবি একটাই, মাধ্যমিকের ফলাফল অনুযায়ী এইচএসসির ফলাফল দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবার আমরা আমাদের এক দফা দাবি জানিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। সেদিন তিনি আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাই আজ আমরা সকাল থেকে এখানে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের ইচ্ছে করেই ফেল করানো হয়েছে। আমরা কোনোভাবে এই ফলাফল মানি না। আমাদের সাবজেক্ট কীভাবে ম্যাপিং হয়েছে সেই বিষয়ে জানতে চাই। কেননা পরীক্ষা দেওয়ার পরেও কীভাবে অনুপস্থিত আসে? চট্টগ্রাম বোর্ডে সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি বলে দাবি করে শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে এখানে অবস্থান করছে। আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। আমরা দফায় দফায় তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবি নিয়ে ঢাকায় রোববার সকাল থেকে অন্তত ১৫ বার কথা বলেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়েছে। সেটাও পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের দাবি আমরা উপর মহলকে জানিয়েছি। এখন যা করার মন্ত্রণালয় করবে। আমাদের হাতে আর কিছুই নেই।
রাত ১০টার দিকে পাঁচলাইশ থানা জানায়, শতাধিক শিক্ষার্থী তখনও শিক্ষাবোর্ডের সামনে অবস্থন করছে। তাদের নানাভাবে সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা বললেও তারা মানছে না। পুলিশ ও সেনাবাহিনীও সেখানে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করে বোর্ডের এক কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, সকাল থেকে বোর্ডে আটকা ছিলাম। আমরা খেতে যেতে পারিনি। অনেককে নানাভাবে কষ্ট পোহাতে হয়েছে। বোর্ডের কাজ করতে এসে অনেকে ফেরত গেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান তাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে। তবু তারা মানতে রাজি না। তারা বোর্ডের প্রধান গেটসহ ভিতরের কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। অনেকে ভিতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ করে। অনেক শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিভিন্ন সেবা প্রার্থী লোকেরা দূর–দূরান্ত থেকে এসে বিকাল পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিল।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর আমিরুল মোস্তফা জানান, কেউ যদি কোনো একটা বিষয়ে খারাপ করে তাহলে ফেল আসবে। এখানে কারও হাত নেই। যে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে তেমন ফলাফলই পেয়েছে। তারপরও যদি কেউ আশানুরূপ ফল না পায় তাহলে তো অবশ্যই তা পুনঃনিরীক্ষণ করার সুযোগ আছে। আর পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই–বাছাই করে আবার রেজাল্ট দেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। পরে বৈষম্যহীন এইচএসসির ফলাফলের দাবিতে গত ১৭ অক্টোবর বোর্ড ঘেরাও করে আন্দোলনে নামে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।