পাল্টা কমিটির পথে পদবঞ্চিতরা

বাবুনগরীদের কমিটি প্রত্যাখ্যান শফীর অনুসারীদের

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ

পাল্টা কমিটি গঠনের পথেই হাঁটছেন হেফাজতে ইসলামের পদবঞ্চিতরা। যারা বিলুপ্ত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, তারা ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখান করেছেন। গতকাল রোববার দিনভর তারা রাজধানীতে বৈঠক করেছেন। সেখানে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের দাবি, সংবিধান মেনে কাউন্সিল হয়নি। নবগঠিত কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন হয়নি।
গতকাল কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হেফাজতে ইসলামের কমিটিতে বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক ও প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীসহ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শীর্ষ নেতা বাদ পড়েছেন। বাদ পাড়া এ অংশটি হেফাজতের আলাদা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর পূর্ব ধোলাইরপাড়ের আসকান টাওয়ারে মুফতি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেন বাদ পড়া শীর্ষ নেতারা। রাত ১১টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। সেখানে উপস্থিত এক হেফাজত নেতা আজাদীকে বলেন, বৈঠকে উপস্থিত সবাই নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে শাহ আহমদ শফীর খলিফা ও তার অনুসারীদের সমন্বয় করে করা হবে। যেহেতু সারা দেশে অনুসারীরা আছেন, তাই সবার মতামত পাওয়া যায়নি। এজন্য শীঘ্রই বৃহৎ আকারে সভার আয়োজন করা হবে। সেখানে নতুন কমিটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী আজাদীকে বলেন, নতুন যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটা আমরা প্রত্যাখান করছি। এ কমিটি সংবিধানিকভাবে গঠিত হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গঠন করা হয়েছে। যুগ্ম মহাসচিবসহ অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলে দাওয়াতও করেনি। আবার কাউন্সিল করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কোনো অনুমতিও নেয়নি। আমরা কাউন্সিলকে অবৈধ মনে করছি।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ও পর্যালোচনা করছি, যে কমিটি গঠন হয়েছে সেখানে অনেক বিতর্কিত লোক আসছেন। তাদেরকে কখনো হেফাজতের মিটিং ও আন্দোলনে দেখিনি। যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে তারা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারী। এমনকি আহমদ শফীর দুই ছেলে আনাস মাদানী ও ইউসুফ মাদানীকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন যারা কমিটিতে আসছেন তাদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক কর্মী। অথচ গঠনতন্ত্রে আছে, শীর্ষ পদে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকতে পারবেন না।
গতকাল অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে পাল্টা কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আগামীকাল (আজ) আবার বসব। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত যা হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিকেলে সাবেক নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, হেফাজত ইসলাম জাতীয় এবং সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান। আমাদের আমির (আহমদ শফী) ইন্তেকাল করেছেন। এখন কমিটি পুনর্গঠন করার দরকার ছিল না। আমিরের জায়গায় একজন আমির ঠিক করলেই হয়ে যেত।
তিনি বলেন, আমি নায়েবে আমির এবং ঢাকা মহানগরের প্রধান উপদেষ্টা। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। সম্মেলনের আগ পর্যন্ত কোনো চিঠিও দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে অনেকেই বাদ পড়ে গেছেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হেফাজতে ইসলামের সর্বজনীন যে ব্যাপকতা, সেটা ক্ষুণ্ন করার জন্য বিশেষ মহলের ইঙ্গিতে করা হয়েছে বলে মনে করি।
বৈঠক থেকে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হাটহাজারী হুজুরের জন্য একটি দোয়া মাহফিল করব। সেটাই বৈঠকের আলোচ্য বিষয়। এরপর বসে হাটহাজারীতে যে কমিটি হয়েছে সেটার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। তবে কমিটি সর্বজনীন ও নিয়ম অনুযায়ী হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যবহার ছাড়াই নষ্ট অর্ধ কোটি টাকার মেশিন
পরবর্তী নিবন্ধহেফাজতের কর্তৃত্ব বাবুনগরীর হাতে