গত বছরও করোনার ভয়াবহতার কারণে ঈদুল ফিতরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু পার্সেল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এই পার্সেল ট্রেনে করে যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ ছিল গত বছরও। ঈদুল ফিতর যতই ঘনিয়ে আসছে পার্সেল ট্রেনে যাত্রী পরিবহন ততই বাড়তে থাকে। খোদ রেল কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনও পার্সেল ট্রেনে করে যাতায়াত করার খবর গতবছর মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছিল। এই বছরও ঈদুল ফিতর যতই ঘনিয়ে আসছে পণ্যবাহী পার্সেল ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই এ অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল এ ট্রেনে করে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন হয়েছে বলে রেল স্টেশন থেকে মোঃ বোরহান নামে এক যুবক ফোন করে আজাদীকে জানিয়েছেন। বিশেষ করে করোনাকালীন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে জামালপুর সরিষাবাড়ি পর্যন্ত প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত পণ্য, সবজি, মাছ, শুটকি ও ফলমূলসহ জরুরি পরিবহনের জন্য পার্সেল ট্রেন চালু করে। এতোদিন পার্সেল ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলেও গত কয়েকদিন ধরে পার্সেল ট্রেনে রেলের কর্মচারী এবং আরএনবিসহ মিলে একটি সিন্ডিকেট যাত্রী পরিবহন করে আসছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এই ব্যাপারে রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী পার্সেল ট্রেনটি ২২টি স্টেশনে বিরতি নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সীতাকুণ্ড, চিনকি আস্তানা, ফেনী, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব বাজার কালিয়ারচর, বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী, গচিহাটা, কিশোরগঞ্জ, নান্দাইল, আঠারবাড়, সোহাগী, ঈশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর ময়মনসিংহ জংশন, ময়মনসিংহ নুরুন্দি, নন্দিনা ও জামালপুর স্টেশন। সব ক’টি স্টেশন থেকেই যাত্রী তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত আজাদীকে বলেন, পার্সেল ট্রেনে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে আমি অভিযোগ পাইনি। তবে আমাদের স্টাফরা বিভিন্ন স্টেশনে কাজে যান। দূরপাল্লার গাড়িও বন্ধ। এখানে যাত্রী যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের স্টাফদের যেতে দেখে হয়তো কেউ যাত্রী মনে করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে রেলের কর্মচারী এবং আরএনবির সদস্যদের যোগসাজশে যাত্রী যাচ্ছে-এমন প্রশ্নের জবাবে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশগুপ্ত বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী আজাদীকে বলেন, পার্সেল ট্রেনে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে ২দিন অভিযোগ পেয়েছি। আমি স্টেশনের আরএনবি টিমকে দায়িত্ব দিয়েছি যাতে বাইরের কোনো লোক যেতে না পারে। তবে আমাদের কিছু স্টাফ যারা বাইরে বিভিন্ন স্টেশনে কাজ করেন তাদেরকে যেতে দিতে হয়। এমনিতে পার্সেল ট্রেনে যাত্রী যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
একই কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরীও। তিনি জানান, আমাদের কিছু স্টাফ যারা বিভিন্ন স্টেশনে কাজ করেন শুধু তারাই যান। বাইরের যাত্রী যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে অনেকেই সুপারিশ করেন যাওয়ার জন্য। তবে পার্সেল ট্রেনে পণ্য ছাড়া যাত্রী পরিবহনের সুযোগ নেই। এখন পণ্য পরিবহন বেড়েছে। আয়ও বেড়েছে। রবিবারও চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর পণ্য গেছে। ১ লাখ টাকার মতো আয় হয়েছে। এখন পণ্য পরিবহন বেশি হচ্ছে।