এক গ্রামে থাকে এক কৃষক। কৃষকের একটি শখের গরু আছে। গরুটির নাম পারুল। পারুল খুবই সোজাসাপ্টা। কিন্তু তার ছেলে ভোমলা বাছুরটি খুবই দুষ্টু প্রকৃতির। সে সবসময় পারুলকে উত্ত্যক্ত করে। বেচারী পারুল অনেক বুঝিয়ে বললেও ভোমলা কথা শোনে না।
কৃষক প্রায়ই গ্রামের অন্যান্য গরুর সঙ্গে পারুলকে গ্রামের বাইরে চরাতে পাঠায়। একদিন ভোমলাও পারুলের সঙ্গে গ্রামের বাইরে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করল। পারুল তাকে অনেক বুঝিয়ে বলল, কিন্তু ভোমলা রাজি হলো না। পারুল তাকে নিয়ে যেতে রাজি হলো।
ভোমলা বাচ্চা আমার, ওখানে একটা জিনিস খেয়াল রেখো।
ভোমলা জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার মা?
পারুল বলল, তুমি গ্রামের বাইরে আমার সঙ্গে থাকবে। অন্য কোথাও যেও না, তুমি পথ ভুলে যাবে।
ভোমলা বলল, ঠিক আছে মা, আমি তোমার সঙ্গে থাকব।
এরপর ভোমলা বাইরে বেড়াতে গেল। পথে ভোমলা তার মায়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে হাঁটল। কিন্তু গ্রামের বাইরে পৌঁছে যখন পারুল অন্যান্য পশুদের সঙ্গে চরাতে শুরু করল, তখন ভোমলা মাকে ছেড়ে দিল। ভোমলা ভাবল মা যতক্ষণ ঘাস খাচ্ছে, আমি ততক্ষণ হেঁটে ঘুরে বেড়াই।
হাঁটতে হাঁটতে ভোমলা অন্য প্রাণীদের থেকে অনেক দূরে চলে এলো। থেমে গেলে সামনে ঘন জঙ্গল দেখতে পেল। জঙ্গল দেখে সে খুব খুশি হল। সে ভাবল বনে হাঁটা শুরু করি। সে লাফিয়ে লাফিয়ে বনের ভেতর চলে গেল।
ভোমলা কিছুদূর যেতেই বনের ভেতরে একটি বিকট শব্দ শুনতে পেল। আওয়াজ শুনে সে খুব ভয় পেল। সে তাকাতেই সামনে একটা বড় ভাল্লুক আসতে দেখতে পেল। ভোমলাকে দেখে ভাল্লুক তার চারপাশে ঘুরতে লাগল এবং তাকে বলল, এই বাছুর, তুমি কোথায় থেকে এলে? তোমার নাম কী?
ভোমলা বলল, আমি বনে ঘুরে বেড়াতে এসেছি।
তুমি কার সঙ্গে এসেছো?
ভাল্লুকের কথা শুনে ভোমলা কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি গ্রামের ভাই। ভোমলা আমার নাম। বাড়ির পথ ভুলে গেছি। আমি বনে বেড়াতে এসেছি। আমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। আমি মায়ের কাছে যাব।
ভাল্লুক তার কথা শুনে জোরে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে বলল, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছো? পথ ভুলে গেছো? আমি পথ দেখাব কেন? এখন তোমার নিজের কাজ করো। তুমি শাস্তি পাও।
ভাল্লুকের কথা শুনে ভোমলা আবার কাঁদতে শুরু করল। ভাল্লুক তাকে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর একটি চিতা এলো। ভোমলা চিতার কাছেও অনুরোধ জানাল তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু চিতাও তাকে ঠাট্টা করে সেখান থেকে চলে গেল।
চিতা চলে যাওয়ার পর ভোমলা খুব ঘাবড়ে গেল। সে আফসোস করল কেন মায়ের কথা শোনেনি। সে ভাবল বাড়ি ফেরার পথ কাকে জিজ্ঞেস করবে? ঠিক তখনই সামনে থেকে একটা বানরকে আসতে দেখা গেল। বানরটিকে দেখে ভোমলা দৌড়ে তার সামনে এসে জোরে জোরে হেঁচকি দিয়ে কাঁদতে লাগল। বানরটা তার প্রতি করুণা করল। ভোমলার কাছে এসে তাকে শান্ত করে বলল, বাছুর কোথায় থেকে এলে? তোমার নাম কী? বনের ভেতর কেন কাঁদছো?
বানরকেও ভোমলা সেই কথাই বলল যা ভাল্লুক ও চিতাবাঘকে বলেছিল। বানরটা তার কথা শুনে হাসতে লাগল। আর তাকে বলল, ভোমলা আমি তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাব। আমি পথও বলে দেব। কিন্তু তোমাকে আমার কথা মানতে হবে।
কাঁদতে কাঁদতে ভোমলা বলল, হ্যাঁ বানর চাচা, আমি তোমার সব কথা মেনে নেব। তুমি আমাকে বাড়ি ফেরার পথ বলো।
বানর তাকে বুঝিয়ে বলল, দেখো ভোমলা, তুমি এখনও অনেক ছোট। তোমার এভাবে একা ঘুরে বেড়ানো ঠিক নয়। আর কখনো এমন করো না।
ভোমলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, হ্যাঁ চাচা, ঠিকই বলেছ। মা আমাকেও বুঝিয়েছিল কিন্তু আমি তার কথা শুনিনি।
তাকে বোঝাতে গিয়ে বানর বলল, তাহলে এখন থেকে আর কখনো এমন করবে না। মায়ের কথা সব সময় মানবে। বলো, তুমি কি রাজি হবে?
ভোমলা বলল, হ্যাঁ চাচা, এখন আমি সবসময় আমার মায়ের কথা মেনে যাব।
এরপর বানরটি ভোমলাকে বনের বাইরে নিয়ে গেল। ভোমলা তার গ্রামের দিকে দ্রুত দৌড়ে গেল। শীঘ্রই তার মা পারুলের কাছে পৌঁছে গেল।