মা বাবা আমাদের জীবনের পরম নির্ভরতার জায়গা। যারা হচ্ছেন সন্তানের জীবনের হাসি কান্নার সব উপকরণ নিশ্চিন্তে জমা রাখার ব্যাংক। তদ্রুপ পরিবার হচ্ছে সুখ দুঃখের জীবন বীমা। ভাল সময় মন্দ সময়ে পরিবার হাত বাড়িয়ে আগলে রাখে।যে পরিবারের পারিবারিক বন্ধন মজবুত সে পরিবারের কোনো সদস্যের উপর বিপদের সাইক্লোন বয়ে গেলেও মুছড়ে পড়ার ভয় থাকে না।এই করোনাকালে আমরা তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি। কোনো কোনো পরিবার আপন রক্তের করোনা আক্রান্তের সংবাদে বা বিপদে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এমন কি লাশ গ্রহণ বা শেষ বিদায়ে ও আপন মানুষরা শরীক হয়নি।আবার অন্যদিকে অনেক পরিবার তাদের আপনজনের করোনাক্রান্ত হবার সংবাদে বিচলিত থেকেছে, করোনার ভয় উপেক্ষা করে খাবার, ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছে, হাসপাতালে ডিউটি করেছে। আবার দেখা গেছে আত্মীয় পরিজন বিপদে কাছে থাকে না, বন্ধু বান্ধব সহকর্মী বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইত্যাদি নানা ঘটনা আমাদের অভিজ্ঞতা ও আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে। অর্থ বিত্ত থাকলে যে বিপদে ঢাল তলোয়াড়ের কাজ করে সব কিছু থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তাও এ করোনাকালে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
একটা চারাগাছকে আমরা সযত্নে পরিচর্যা করি শুধু বড় হলে এটার প্রকৃত ব্যবহার, ছায়া এবং ফল পাবার আশায়। তেমনি সম্পর্কগুলোকে যত্ন নিতে হয় পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার জন্য।পরিবারের সবাই সমান মানসিকতার হয় না, কেউ কেউ ভিন্ন পরিবারের ভিন্ন পরিবেশ থেকে আগত তাই ভিন্ন মানসিকতার হয়।কেউ কেউ নিজের উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নানা কূটচালের আশ্রয় নিয়ে পারিবারিক সমপ্রীতি বিনষ্ট করতে তৎপর থাকে। তাকে অন্য সদস্যদের প্রশ্রয় না দিয়ে কৌশলে অপতৎপরতা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করা উচিত। নতুবা সোনার সংসার মায়ার সংসারের ভাঙন নিশ্চিত। পরিবারের সকলের মধ্যে যদি সমপ্রীতি থাকে একতা থাকে তাহলে অনেক বড় বড় সমস্যা ও মোকাবিলা করা সম্ভব। অনেক পরিবারের সদস্যরা দূরে দূরে থেকেও কাছাকাছি বিপদে পাশাপাশি। তুচ্ছ স্বার্থ, হীনমন্যতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী হয়েছে। এখানেই জীবনের সৌন্দর্য, সার্থকতা। বহু আগে থেকে আমাদের সমাজের একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে গেছে যার কুফল এখন আমরা পাচ্ছি। আমাদের সন্তানরা একা একা বড় হচ্ছে উদারতার শিক্ষা না পেয়ে স্বার্থপরতা শিখছে যার ফলে বৃদ্ধ বাবা মাকে হয় ওল্ড হোমে রাখছে নতুবা উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে বাবা মাকে নিঃস্ব করে দিয়ে।একটা সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন, পারিবারিক শিক্ষা -সহযোগিতার সহমর্মিতার ও মনুষত্বের শিক্ষা।সবচেয়ে জরুরী ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা। ধর্মীয় শিক্ষাই পারে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে।
যেকথা না বললেই নয়, পারিবারিক ভাঙ্গন রোধ করতে পারে বড়দের দায়িত্বশীল ভূমিকা। আপনি আপনার মেয়েকে যেভাবে সাংসারিক জীবনে দেখতে চান সেভাবে যদি ছেলের বৌকেও দেখেন তবে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আপনি চান আপনার মেয়ে সুখে থাকুক, জামাই মেয়েকে ভালোবাসুক সেরকম চাইতে অসুবিধা কোথায় ছেলে ও ছেলের বৌকে ভালোবাসুক। বেনিফিট কিন্তু আপনারাই পাবেন। কেবল স্বার্থপরতা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নিজেকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করাই,বিবেক ও আবেগের সমন্বয় করে জীবন চালিত করি দেখবো, “পারিবারিক বন্ধন দূর করে ক্রন্দন ‘আসুন, মানবতা ফেরী করি, মানবতায় জীবন গড়ি’।