পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা সুন্দর সমাজ তৈরির মূল চাবিকাঠি

তারিফা হায়দার | শুক্রবার , ২৩ জুন, ২০২৩ at ৯:০৮ পূর্বাহ্ণ

মানুষ সামাজিক জীব। সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। কখনও একা বাস করতে পারে না বলেই টিকে থাকার জন্য মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শুরু হয় সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সমাজে ভিন্ন ভিন্ন পেশা, ধর্ম, শ্রেণি ও মতামতের মানুষ বাস করে। ফলে সংগত কারণেই ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ভিন্ন ভিন্ন আচরণ সমাজে দেখা যায়। এই সকল ভিন্ন আচরণ অথবা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ একে অপরের মতামত ও জীবনাচরণ মেনে নেয়াই হলো সহনশীলতা।

সহনশীলতা একটি গুণ, যা চরিত্রগতভাবে মানুষ অর্জন করতে পারে। আবার শিক্ষার মাধ্যমেও আয়ত্ত করতে পারে। সহনশীলতার জন্য চাই অন্যের মত ও আচরণকে সহ্য করা। অন্যের অধিকার মেনে নেওয়া, মনকে উদার করা। আর সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন করাই হলো শ্রদ্ধাবোধ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের মতামত, পছন্দ অপছন্দ অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর এর ফলে শুরু হয় ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক দূরত্ব ও সংঘাত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন মানুষ নিজেকে আলাদা করে ফেলে এবং তৈরি হয় সামাজিক দূরত্ব। ফলে সমাজে শান্তি পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি ব্যাহত হয়, মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে, পারস্পরিক বন্ধন শিথিল হয় এবং সম্পর্কে ভাটা পড়ে।

যে কোনো সম্পর্কের শুরুটা হয় পরিবার থেকেই। তারপর তা সমাজ এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্রে বিস্তার লাভ করে। যেহেতু পরিবারই মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধ তৈরীর মূল কেন্দ্র সেহেতু পরিবারের ছোটবড় সকল সদস্যের একে অপরের প্রতি সহনশীলতা ও শ্রদ্ধা বোধের শিক্ষা ও চর্চা এখান থেকেই শুরু হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। পরিবারে একে অপরের মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া, কোন আচরণ অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তা ভদ্রতার সাথে শুধরে দেওয়া, পরস্পর কে মেনে ও মানিয়ে নেওয়া, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, ছোট ছোট ভুল ত্রুটি কে ইতিবাচক ভাবে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে সম্পর্ক সুন্দর হয় ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।

আজকাল চারপাশের মানুষ গুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও অসম প্রতিযোগিতা দেখা যায়। একে অপরকে ছোট করার জন্য তীর্যক কথার তীর ছুঁড়ে দেয়, মানুষকে অপদস্ত করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় ও কটুক্তি করে। অথচ এসব হীন মানসিকতার মূল কারণ হলো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার অভাব। যে সম্পর্কের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ নেই, সহমর্মিতা ও সহনশীলতা নেই সেই সম্পর্ক কখনোই সুস্থ সম্পর্ক হতে পারে না।

সহনশীলতার অভাবে মানুষ অধৈর্য হয়ে পড়ে ও বিভিন্ন অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রকৃত শান্তি নষ্ট হয়। অথচ বোধবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ চিরকালই শান্তি ও সম্প্রীতি প্রত্যাশা করে। কিন্ত ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, ক্ষমা ও শ্রদ্ধা এই গুণগুলি যখন হারিয়ে যায় তখনই তৈরি হয় দ্বন্দ্ব, বিরোধ ও বিভেদ। প্রকৃত অর্থে যারা নিজেদের রাগ ও অহংকার সংবরণ করে অন্যের প্রতি সুন্দর আচরণ প্রদর্শন করে তারাই মহান। মানবধর্মের মূল কথাই হলো সহনশীলতা ও মানবতা। একটি সুন্দর ও স্থিতিশীল সমাজ তৈরীতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের ও মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। পারস্পরিক কোন্দল, হানাহানি বন্ধ করে সহনশীলতা ও পরমত সহিষ্ণুতা অতীব জরুরি।

সহনশীলতা একটি সামাজিক মূল্যবোধ। সমাজে প্রত্যেক মানুষের ধর্মীয় কুসংস্কার ও জাতিগত বিভেদ ভুলে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও সহনশীলতা প্রদর্শন করে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করলে একটি সুন্দর সম্পর্ক গঠন সম্ভব। তবেই তৈরী হবে একটি সুস্থ ধারার সুন্দর সমাজ তথা রাষ্ট্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃদ্ধাশ্রম নামক ব্যবস্থার অবসান হোক
পরবর্তী নিবন্ধমুজিব হলেন ত্রাতা