পান্তাভাত কড়চা

পারভীন রব্বানী | বৃহস্পতিবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

১লা বৈশাখ বা নববর্ষ এক অনিন্দ্য সুন্দর মহান উৎসব। সকল উৎসবকে ছাপিয়ে এই নববর্ষ এক সার্বজনীন উৎসবে পরিণনত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষীর কাছে নিজের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার আপ্রাণ প্রচেষ্টা সমৃদ্ধ করে এই প্রধান উৎসবকে। দোকানে দোকানে হালখাতা এবং মিষ্টিমুখ তো রয়েছেই। বৈশাখী মেলাও চলে শহরে, গ্রামে গঞ্জে বেশ কয়েকদিন ধরে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটে পান্তা ভাত নিয়ে। এই দিনে পান্তা ভাতের কদর বেড়ে যায় বহুগুন। শহরের ধনী লোকদের সুসজ্জিত ডাইনিং টেবিলে, দামী দামী রেস্টুরেন্টে বেশ অহংকারের সাথেই রাজার আসনে বসে থাকে পান্তা ভাত। তার আশে পাশেই থাকে মন্ত্রী পরিষদ… যেমন, ইলিশ মাছ ভাজা, নানারকমের ভর্তা, কাঁচামরিচ, পোড়ামরিচ, কাঁচা পেঁয়াজ আরো কতো কি! রমনার বটমূল, ছোট ছোট দোকান, পাড়া মহল্লা, বাসা বাড়ি কেউই বাদ যায় না পান্তা ভাতের আয়োজন থেকে। আর এই সুযোগে মহামান্য ইলিশ সাহেব/ সাহেবানের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। বুদ্ধিমান লোকেরা আগে ভাগেই ডিপ ফ্রিজ ভরে রাখে ইলিশে। ইলিশ মাছের অনুপস্থিতিতে আভিজাত্যে যেন ঘাটতি না পড়ে। কথায় আছে, বড়লোকদের শখ আর গরীবের প্রয়োজন। নিত্যদিনের খেঁটে খাওয়া মানুষেরা সকাল বেলা হলেই হাপুস হুপুস করে এক থালা পান্তা ভাত গিলে বেরিয়ে পড়ে কাজে। তাদের কাছে এই একদিনের পান্তা ভাত খাওয়া হাস্যকর। সাদা, লাল এবং নানারূপের সাজে ছেলে মেয়ে, শিশু পান্তা ভাত খাওয়ার আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। ফেসবুকের পাতা ভরে যায় পান্তা-ইলিশ আর ভর্তার ছবিতে। চলে দাওয়াতের হিড়িক পান্তা ভাতের (সাথে থাকে পোলাও, মাংস, কালিয়া, কোপ্তা ইত্যাদি)। রোযার মধ্যে এই পান্তা ভাত খাওয়ার হুজুগে ভাটা পড়লেও ইফতারিতে সবাই সেটা পুষিয়ে নেয়। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলেন, পান্তা ভাতে প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই পান্তা ভাত বানানোও অনেক সহজ। রান্না করা ভাতে, ১২ ঘন্টা ধরে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ঢেকে রাখলেই হয়ে গেলো নববর্ষের রাজা পান্তা ভাত। একদিনের জন্য হলেও গান গাইতে ইচ্ছে করে, ‘পান্তা ভাত.. তুই আমারে বানাইলি দিওয়ানা’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআনন্দে জাগো আজি
পরবর্তী নিবন্ধসর্বপ্রাণে নন্দিত উৎসব পহেলা বৈশাখ