পানি রাখতে পাহাড়ে লাউয়ের খোল

| রবিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম পাত্রের পরিবর্তে লাউয়ের খোলকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানি সংরক্ষণের পাত্র বানিয়ে ব্যবহার করছে বান্দরবানের ম্রো ও খুমীসহ কয়েকটি জনগোষ্ঠী। লাউয়ের খোলের এ পাত্রকে ম্রো ভাষায় ‘তুইয়া’ বলা হয়। সাধারণত পাহাড়ি দুর্গম এলাকার ঝরনা-ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে রাখা হয় এতে। এই পাত্র একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে গরমের সময় পানিকে ঠান্ডা রেখে প্রশান্তি আনে শরীর-মনে।
ম্রো ও খুমীরা বলছেন, লাউয়ের খোলে অন্তত এক সপ্তাহ পানি রাখা যায়; গরমকালে এতে পানি বেশ ঠান্ডাই থাকে। ঝিরি-ঝরনার পানি অপরিষ্কার থাকলে পাত্রের একটা নরম অংশ আপনা-আপনিই তা ‘পরিশুদ্ধ’ করে। গরমকালে জুমক্ষেতে কাজ করার সময় পানিভর্তি লাউয়ের খোল অনেকে কলা গাছের গোড়ায় গর্ত করে পুঁতে রাখেন। ঘণ্টা দুয়েক পরে এর পানি ফ্রিজে রাখা পানির মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। অভ্যস্ততা না থাকলে শিশুরা হঠাৎ খেলে অনেক সময় সর্দি-কাশিও লেগে যায়। খবর বিডিনিউজের।
ম্রো ও খুমীদের গ্রামে গেলে প্রত্যেকের ঘরে অন্তত ত্রিশ থেকে চল্লিশটা ‘তুইয়া’ বা লাউয়ের খোলের দেখা মিলবে। ত্রিপুরা এবং বম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লাউয়ের খোল ব্যবহার থাকলেও তা শুধুমাত্র দুর্গম এলাকায় দেখা যায়।
সাধারণত জুমক্ষেতে কিংবা ঘরের চালে ফলন হয়ে থাকে এই লাউ। তবে এই জাতের লাউ খাওয়া যায় না। প্রথমে সুন্দর ও ভালো আকারের পরিপক্ব লাউ দেখে সংগ্রহ করা হয়। এরপর ছিদ্র করে ভেতরে পানি জমিয়ে রেখে পচানো হয় ভেতরের অংশ। পনের-বিশ দিন পর পচা অংশ ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হয়। তারপর ভালো করে শুকানো হয় রোদে। শুকনো লাউকে ঘরে চুলার উপর ঝুলিয়ে রাখা হয় কয়েক মাসের মতো। এক সময় লাউয়ের বাইরে অংশ কালো হয়ে ওঠে। তারপর ভালো করে ধুয়ে ব্যবহার করা হয় পানির পাত্র হিসেবে। তবে যেগুলো পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয় সেগুলোতে জুমের বিভিন্ন বীজ রেখে দেওয়া হয়। জুমবীজ ছাড়াও ঘরে হলুদ এবং লবণের পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় লাউয়ের খোল। ফেটে না গেলে কিংবা না ভাঙলে এই খোল অনেক বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে হোটেল থেকে পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধরাজনীতির নামে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজিতে অতিষ্ঠ বোয়ালখালীবাসী