গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ প্রত্যেকটি মহান সৃষ্টিকর্তার দান এবং প্রাকৃতিক সম্পদও বটে। একটি অপরটির সাথে নিবিড় সম্পর্ক। পানি বা কয়লা না থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। ঠিক তেমনি বিদ্যুৎ না থাকলে বাসায় পানি থাকে না। গ্যাসেরও একই অবস্থা। বিদ্যুৎবিহীন জনজীবন অচল। আমার ইশকুলবেলার বন্ধু দেবু। ভূতের গলিতে তার বাসা। দেবুর বাসা ছিল চিলেকোঠায় ছোটো একটি কক্ষ, তাও আবার কবুতরের কোপের মতো। এক কুঠরি বাসা দরজায় খিল নেই। বড়ো লাঠি বা ইট দিয়ে ভিতর থেকে আটকে রাখা হয়। আঞ্চলিক ভাষায় অনেকে এই লাঠিকে ভুকবারিও বলে। ওয়াশ রুমের দরজাবিহীন যে কেউ ওয়াশরুমে গেলে বেসুরে গলায় গাইতে থাকে ‘মে আগানে ওয়ালা’ দিনের বেলায় বিদ্যুৎ না থাকলে মনে হয় এ তো বাসা নয় যেন সাড়ে তিন হাত মাটির কবর। একদা জ্যৈষ্ঠমাসের তাপদাহ দুপুরে বন্ধু দেবু ওয়াশ রুমে গিয়ে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। টয়লেট ক্লিনারকে শ্যাম্পু মনে করে বেচারা মাথায় মেখে বিপাকে পড়লো। ওরে বাবারে বাঁচাও বাঁচাও মাথা জ্বলে যাচ্ছে গো। দেবু তাড়াহুড়া করে অন্ধকারে স্ত্রীর পেটিকোটকে পরিধানের লুঙ্গি মনে করে পরে সোজা ডাক্তার চেম্বারে। সে তো দেখেই হেসে খুন। সাবধান লোডশেডিং–এ সতর্ক থাকুন না হয় দেবুর মতো হবে।
আমরা কারণে অকারণে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ অপচয় করি। দিনের বেলায় লাইট জ্বেলে রাখি। বাসায় পাখা ছেড়ে দিয়ে রাখি, অফিসেও অযথা এসি পাখা অন করে অফিস ত্যাগ করি। কোনো দিবস টিবস হলে কথাই নেই চারিদিকে আলোর জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়। দেশে এখন ভয়াবহ লোডশেডিং এজন্য নিজেরাই দায়ী। মার্কেটে রাস্তা ঘাটে ল্যাম্পপোস্টের বাতি এবং বিলবোর্ডের বাতি দিনের বেলায়ও জ্বলে। আমরা প্রায়শ দিনে সূর্যের আলো ব্যবহার না করে লাইট ব্যবহার করে বিদ্যুৎ অপচয় করি। এবার আসুন পানির কথায়। বিদ্যুৎ না থাকলে পানি নেই। অনেকে ওয়াশ রুমে পানির টেপ কল ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। না হয় অফিসে বা বাজারে চলে যান। এতে করে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে পানির অপচয় হচ্ছে। গ্যাসের কথায় আসুন। বাসা বাড়িতে গ্যাসের তীব্র সংকট। অনেকে দিয়াশলাইয়ের কাঠি ব্যবহার করতে হবে সে জন্য রাত দিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। গ্যাসের চুলা রাতভর জ্বলতে থাকে। অনেকে গ্যাসের চুলার উপর পরিধানের লুঙ্গি, শার্ট প্যান্ট শিশুদের কাঁথা কম্বল শুকাতে দেন। এ থেকে গ্যাসের অপচয় যেমন হচ্ছে তেমনি বড়ো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে। শিল্প–কলখারখানায় অবৈধ গ্যাসের লাইনের ব্যবহারও থেমে নেই। অনেক অ–ভদ্রলোক বাড়িতে এক বার্ণারের জন্য গ্যাসের লাইন নিয়ে দুই বার্ণার বা তার অধিক বার্ণারের চুলা অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।
গ্যাস বিদ্যুৎ পানি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এগুলোর অভাব হলে দৈনন্দিন জীবন অচল হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিকভাবেও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব জাতীয় সম্পদ যারা অপব্যবহার বা অবৈধভাবে ব্যবহার এবং অপচয় করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপসহ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে অধিক সচেতন হতে হবে। একজন সচেতন নাগরিক মানে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। আসুন আমরা জাতীয় সম্পদ ব্যবহারে সচেতন হই। পানি, বিদ্যুৎ গ্যাস অপচয় রোধ করি।