পানি ঢুকে নষ্ট ১০৬ কোটি টাকার পণ্য

বহির্নোঙরে তিন মাস ধরে আটকা বিদেশি জাহাজ সুরাহার অপেক্ষা, পণ্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

পানি ঢুকে নষ্ট হওয়া ১০৬ কোটি টাকার পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে আছে একটি বিদেশি মাদার ভ্যাসেল। বিষয়টি সুরাহার জন্য জাহাজ মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং কাস্টমস কমিশনার বরাবরে চিঠি দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেও জাহাজটি ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু নষ্ট হয়ে যাওয়া পণ্যের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে আছে।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের টিকে গ্রুপ নিজেদের তিনটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে ব্রাজিল থেকে ৫০,০৭১ টন সয়াবিন আমদানি করে। লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী জাহাজ এমভি মানা ব্রাজিলের সান্তারেম বন্দর থেকে পণ্যের চালানটি নিয়ে গত ৮ জুন জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। জাহাজটি বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছার পর টিকে গ্রুপের মালিকানাধীন শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের নামে আনা ৩০ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন খালাস করা হয়। কিন্তু পরে সয়াবিন খালাস করতে গিয়ে দেখা যায়, জাহাজের হ্যাজের ভিতরে সাগরের পানি ঢুকে সয়াবিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন টিকে গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের নামে আনা ২০ হাজার ৭০ টন সয়াবিন গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। তখন থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া সয়াবিনগুলো নিয়ে জাহাজটি সাগরে ভাসছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় বন্দর ছেড়ে যেতে পারছে না ভারতীয় মালিকানাধীন লাইবেরিয়ান খোলা পণ্যবাহী জাহাজ এমভি মানা।

বিষয়টি সমাধানে গত ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমসের হস্তক্ষেপ কামনা করে জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্যাপ্টেন চিঠি দিয়েছেন। ১০ সেপ্টেম্বর তারা বন্দর চেয়ারম্যান এবং কাস্টমস কমিশনারের সাথে দেখা করে বিষয়টি সুরাহা করার অনুরোধ করেন। জাহাজের মালিক অ্যাক্টিভ মেরিটাইম লিমিটেড জানায়, প্রতিদিন তাদের ১৫ হাজার ডলার করে ক্ষতি হচ্ছে।

সয়াবিনের চালানটির আমদনিকারক ডেল্টা এগ্রো ফুডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুস্তফা হায়দার গত রাতে আজাদীকে বলেন, পণ্য ড্যামেজ হওয়ায় কমার্শিয়াল ডিসপুট তৈরি হয়েছে। পণ্যগুলোর দায়দায়িত্ব জাহাজের মালিকপক্ষের। বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেটি মীমাংসা করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে গেছে। ভালো জিনিসটা দেশে আনা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে তো আর নষ্ট জিনিস নিতে পারি না।

জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট সিকম গ্রুপের পরিচালক জহুর আহমেদ আজাদীকে জানান, জাহাজে থাকা প্রতি টন সয়াবিনের মূল্য ৪৪২ ডলার। সেই হিসেবে ২০ হাজার ৭০ মেট্রিক টন সয়াবিনের ক্রয়মূল্য ৮৮ লাখ ৭১ হাজার ৩৪২ ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৬ কোটি টাকার বেশি। তিনি বলেন, জাহাজে পানি ঢোকায় আমদানিকৃত সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। জাহাজটির মালিকপক্ষের বিলম্বের কারণে বিষয়টি সমাধানেও বিলম্ব হচ্ছে। আমদানিকারক এবং জাহাজ মালিককে এই সংকটের সুরাহা করতে হবে। এটা অন্য কারো হাতে নেই। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। নিশ্চয় একটি পথ বের হয়ে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধহাতির বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ!