বান্দরবান এবং সাতকানিয়া–চন্দনাইশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চকরিয়া ও পেকুয়ার ৭০ শতাংশ এলাকা থেকে ভাটির দিকে নেমে গেছে পানি। বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্গত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ভেসে উঠছে রাস্তা–ঘাটের ক্ষত বিক্ষত চিত্র। বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অনেক পরিবার এখনো খাবার রান্না করতে পারছে না। আজ শুক্রবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। এদিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ও কেরানীহাট–বান্দরবান সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। ফলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, পাঁচদিন পর বান্দরবান জেলায় প্লাবিত এলাকাগুলোর বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। তবে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবখানেই কাদামাটি এবং ময়লা আবর্জনা। এগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান, মো. শাহাজালাল ও নাছির উদ্দিন জুয়েল বলেন, বন্যার পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। তবে সেনাবাহিনী, পৌরসভা এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
বান্দরবান–চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলেও পাহাড় ধসে সড়ক বিধস্ত হওয়ায় রুমা ও থানচি উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাঁচদিন পরও বান্দরবান জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। এদিকে পাহাড় ধসে এবং বন্যায় পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রশাসন।
সাতকানিয়া প্রতিনিধি জানান, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এ উপজেলায় এখনো দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান আলী জানান, পানি নেমে গেলেও অধিকাংশ ঘরে খাবার রান্না করা যাচ্ছে না। অনেকের বসতঘর ভেঙে গেছে। ফলে মানুষ খাবার নিয়ে চরম সংকটে রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ হাজার লিটার পানি বরাদ্দ পেয়েছি।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, এখনো পানির নিচে কৃষকের সিংহভাগ ক্ষেতখামার। উপজেলায় প্রায় ২ হাজার মাটির বসতঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে খালের পাড় ও রাস্তা। ডুবে গেছে মাছ চাষের পুকুর ও পোল্ট্রি খামার। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ক্ষত চিহ্ন। লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম জানান, বন্যার পানি সম্পূর্ণ সরে গেলে কৃষকের ক্ষেতের চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানি সরে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজন তাদের বাড়িঘরে ফিরে গেছে। বন্যায় কক্সবাজারের ৬ উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। পানিতে ডুবে ও পাহাড় ধসে চারশিশু ও এক নারীসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়।
চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, পানি কমলেও চকরিয়া–পেকুয়ার সাত লাখ মানুষ বর্তমানে চরম দুর্বিষহ অবস্থায় নিপতিত হয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো পুনঃস্থাপন না হওয়ায়। এছাড়া বাড়ির ভেতর কাদামাটির আস্তরণ পড়ে থাকায় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে নানা রোগ–বালাই ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন তারা। অপরদিকে রান্না–বান্নার কোনো পরিবেশ না থাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তো রয়েছেই। তার ওপর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।