বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের জটিলতার সমাধান দাবি করে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা গত তিন সপ্তাহ ধরে একাডেমিক কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস ও একাডেমিক কাজ থেকে বিরত রয়েছেন।
জানা যায়, ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ওই সমস্যা সমাধানের দাবিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আন্দোলন করে আসছেন। সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে ওই সময় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাস ও একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরেছিলেন। বর্তমানে ক্লাস বর্জনে থাকা শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেটি তারা করেননি। এ কারণে তারা ২৭ জুলাই থেকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালনে আছেন।
জানা যায়, ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে আসা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। তাদের বলা হচ্ছে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস কমিটির রির্পোটের ভিত্তিতে এই সমস্যার অবসান হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এখানে বিপত্তি ঘটে কমিটির এক প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ সদস্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলে। সূত্র জানায়, অব্যাহতি নেয়া ওই প্রভাবশালী বিশেষজ্ঞ ছিলেন বুয়েটের। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৫ সালে চুয়েটের এই বিভাগটি পুরকৌশল অনুষদের অধীনে পুর ও পানিসম্পদ কৌশল নামে যাত্রা শুরু করেছিল। ৩ বছর পর ২০১৮ সালে বিভাগের নাম এবং ডিগ্রি পরিবর্তন করে পানিসম্পদ কৌশল নামকরণ করা হয়। এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা এই নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের কারণে প্রকৌশলী হিসাবে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি চাকুরিতে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন না।
তাদের দাবি সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা প্রায় এক বছর ধরে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছেন। এই সমস্যা সমাধানে দাবি উত্থাপন করে তারা স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, এর আগে দুই দফায় একই দাবিতে আন্দোলন করে আসলেও তারা প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে ক্লাসে ফিরেছিলেন, কিন্তু কোনো বাস্তব সমাধান না পাওয়ায় তারা এখন টানা ক্লাস ও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন হীরা দত্ত বলেন, আমরা বিভাগের তালা খুলে দিয়ে তখনই ক্লাসে ফেরত যাবো, যখন একটা চূড়ান্ত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাবো। যাতে আমাদের প্রতি বৈষম্যের অবসান ঘটে। তারা বলেন, আমরা দুই বার ক্লাস বন্ধ রেখে আবার প্রশাসনের আশ্বাসে ক্লাসে ফিরেছিলাম। কিন্তু কোনো ফলাফল পাইনি। আমরা দেখছি আমাদের বিভাগের ’১৯ ব্যাচ এর শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকুরিক্ষেত্রে ’১৮ ব্যাচের মতোই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই জটিলতার মধ্যে পড়ে আমাদেরকে ‘শিক্ষিত বেকারে’ পরিণত হতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোছাম্মৎ ফারজানা রহমান জুথি বলেন, পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভাগের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছিলেন। উপাচার্য মহোদয় নিয়মানুযায়ী একাডেমিক কাউন্সিলে তা উত্থাপন করেন। বিষয়টি যাচাই–বাছাইপূর্বক দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে ওই কাউন্সিল থেকে একটি কমিটি গঠনের ও তাঁদের মতামত গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।
পরবর্তীতে উপাচার্য মহোদয় কমিটি গঠন করেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ কাজের মাঝপথে কমিটির একজন বিশেষজ্ঞ পদত্যাগ করাতে কাজ বিলম্বিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এখন নতুন কমিটি গঠন করেছে। তাঁরা এখন দ্রুত রিপোর্ট প্রদানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের বারবার সব আপডেট অবগত করা হচ্ছে, তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে ক্লাসে ফিরতে।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা একটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবে না বলছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কমিটি কাজ করছে এবং দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে– কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরবার অনুরোধ করছে। বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী ও কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় চলমান রয়েছে।