চট্টগ্রাম শহরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মোকাবিলায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে ৩০টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো হয়। পরবর্তীতে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বসানো হয় আরও ১৪৪ টি হাইড্রেন্ট। এর মধ্যে ২৭টি বাদে বাকিগুলো সচল আছে। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে বসানো চট্টগ্রাম ওয়াসার ১৭৪টি হাইড্রেন্ট কোনো কাজে আসছে না ফায়ার সার্ভিসের। ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে যে পরিমাণ পানির প্রেসার থাকা দরকার–সেই পরিমাণ প্রেসার নেই বলে অভিযোগ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের। মূলত চট্টগ্রাম ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়হীনতায় অব্যবহৃত পড়ে আছে শহরের ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো।
চট্টগ্রাম শহরে গত কয়েক দশকে কয়েকশ পুকুর, দীঘি, জলাশয় ও জলাধার বিলুপ্ত হয়েছে। এক সময় আগুন নেভাতে পানির উৎস ছিল এসব জলাধার। শহর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানির উৎস নিয়ে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। এর ফলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোকে কাজে লাগানো গেলে ফায়ার সার্ভিসের কাজ আরও সহজতরো হত। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কোনো ভবনে আগুন লাগার পর পানি উত্তোলনের জন্য পাইপ লাগালে যে পরিমাণ পানির প্রেসারের দরকার হবে–সেই পরিমাণ পানির প্রেসার হাইড্রেন্টগুলোতে নেই। যার কারণে ফায়ার হাইড্রেন্ট গুলো কোনো কাজে আসছে না। প্রায়ই নগরীতে বিভিন্ন মার্কেট ও বাসা–বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে অথচ ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো কখনো ব্যবহার করা হয় না।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এক প্রকৌশলী জানান, ওয়াসা চট্টগ্রাম নগরীতে প্রথমবারের মতো হাইড্রেন্ট বসিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাইড্রেন্টের নমুনা নিয়ে এসব স্থাপন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে এসব কাজ করা হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনকাজ শেষ হওয়ার পরও ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে বেশ কয়েকটি সভাও করেছে। এরপর ফায়ার সার্ভিস হাইড্রেন্ট কেন ব্যবহার করছে না, তা জানা নেই। এখন তারা অন্য কথা বলছেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, নগরীতে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করেছিল ওয়াসা। এতে ওয়াসার ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার মত। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে এবং কয়েক দফা আলোচনা করে এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তারা কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ–সহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক আজাদীকে বলেন, হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে যে পরিমাণ পানির প্রেসার থাকা দরকার সেই পরিমাণ প্রেসার নেই। যার কারণে এইগুলো আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমরা এই পর্যন্ত কোনো কাজেই লাগাতে পারিনি এগুলো।
যেমন আগুন লাগার পর প্রথম তলায়, দ্বিতীয় তলায় এবং তৃতীয় তলা–৪র্থ তলায় পানি উত্তোলনের জন্য পাইপ লাগানোর পর যে পরিমাণে পানির প্রেসারের দরকার হবে–সেই পরিমাণ পানির প্রেসার নেই এগুলোতে। যার কারণে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, হাইড্রেন্টে পানির চাপ কম। এগুলো ব্যবহার করতে ন্যূনতম ৪ থেকে ৭ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক) বা ৪০ থেকে ৭০ মিটার উঁচুতে তোলার পানির চাপ প্রয়োজন। এতে টেনেটুনে ১০ মিটার ওপরে ওঠানো সম্ভব। অন্যদিকে হাইড্রেন্টের সঙ্গে হোসপাইপ সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। হাইড্রেন্টের সঙ্গে পাইপ সংযুক্ত করতে যে অ্যাডাপ্টর লাগবে, সেটিও নেই।
নগরীতে প্রায় সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ব্যাপক ক্ষয়–ক্ষতি হচ্ছে। অথচ ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো কখনো ব্যবহার করতে পারছে না ফায়ার সার্ভিস। এগুলো ব্যবহার করা গেলে আগুনের ক্ষয়–ক্ষতি অনেকাংশে কমে আসতো বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলেও মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। এখন আর দেরি না করে দুই সংস্থাকে একসঙ্গে বসে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারের উপযোগী করার মতামত দেন নগর বিশেষজ্ঞরা।