দীর্ঘদিনের পানি সংকট নিরসনের দাবিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে নগরের বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের দামপাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবন কার্যালয়ের সামনে প্রায় শতাধিক বিক্ষুব্ধ গ্রাহক এ বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় তারা নিয়মিত ওয়াসার পানি না পাওয়ায় ওয়াসা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
বিক্ষোভকারী গ্রাহকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে হালিশহর, আগ্রাবাদের বিভিন্ন এলাকা, দেওয়ানহাট, পাঠানটুলি, ধনিয়ালাপাড়া, সুপারীওয়ালাপাড়া, পোস্তারপাড়, মতিয়ারপোলসহ বিশাল এলাকা জুড়ে পানির সংকট চলছে, যা রমজানে চরম আকার ধারণ করেছে। রমজানের আগে থেকেই এসব এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত পানি পাচ্ছেন না। রমজান শুরুর পর থেকে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এতে করে দৈনন্দিন কাজ ছাড়াও মসজিদে অজুর পানিও পাওয়া যাচ্ছে না।
ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন নগর বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম। তিনি বলেন, আমাদের ডবলমুুরিং থানাধীন পুরো এলাকা জুড়ে বছরের প্রায় সময় পানির সংকট থাকে। সেটা নিয়ে আমাদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু এখন পবিত্র রমজান মাস; এই সময়ে দিনের পর দিন পানি না থাকা সেটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পাইপ লাইনের কোনো সমস্যা হলে ওয়াসা এই রমজানে বিকল্পভাবে পানি দিতে পারে। শনিবার থেকে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। প্রায়ই পাইপলাইন ফেটে যাচ্ছে, যার কারণে আমরা তীব্র পানি সংকটে ভুগছি।
২৩ নং উত্তর পাঠানটুলী চট্টগ্রাম ওয়াসা গ্রাহক কল্যাণ কমিটির সদস্য সচিব মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোজা রেখে পানির কষ্ট আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। খাওয়ার পানি কিনে খাওয়া গেলেও ব্যবহারের পানি নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হচ্ছে। ওয়াসার লাইন কাটা পড়ার খবর শুনেছিলাম। এতদিনেও কেন এর সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না?
ধনিয়ালাপাড়া মহল্লা কমিটির সভাপতি মো. জাহেদ হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় সারা বছর পানির সংকট থাকে। এখন রমজানে দিনের পর দিন পানি নেই। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা ওয়াসার গ্রাহক, আমরা মাস শেষে ওয়াসাকে পানির বিল দিই। পাইপ লাইন কেটে গেলে ওয়াসা বিকল্পভাবে আমাদের পানি দিতে পারে। একেবারে পানি না পেলে আমরা মসজিদে অজুর পানি পাবো কোথায়? ইফতার–সেহেরিসহ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানির কী হবে?
ওয়াসার গ্রাহক কল্যাণ কমিটির আহ্বায়ক মো. আলী বলেন, আমরা ওয়াসায় অভিযোগ জানাতে এসেছি। এখানে কার গাফিলতি আছে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। আমরা চাই এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। মো. রফিক নামে আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাসাবাড়ি, মসজিদ–মাদ্রাসা, স্কুল–কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চট্টগ্রাম ওয়াসার অসহনীয় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত ওয়াসার পানির অভাবে আমাদের জীবন দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এখানে দুর্ভোগের আরেক নাম ওয়াসার পানি। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
ওয়াসা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন মানবাধিকার কর্মী মো. এরশাদ আলম, সমাজকর্মী মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. মহসীন, আবদুল আজিজ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে পাহাড়তলী সাগরিকায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) একটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলাকালে কাটা পড়ে ওয়াসার ১১০০ এমএম ব্যাসের পানি সঞ্চালন লাইন। ফলে নগরের বৃহত্তর হালিশহর, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ আশপাশের অন্তত ১৮টি এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ গত তিনদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
সন্ধ্যার মধ্যে সমাধানের আশ্বাস : গতকাল বিক্ষোভকারীরা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার পাশার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে দ্রুত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নাগরিকদের দুর্ভোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে সন্ধ্যার ভেতর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।