দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয় তার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সম্ভবত পানিতে ডুবে মৃত্যু। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রতিকার প্রতিরোধে নানা উপায় উদ্ভাবনে সরকার ও বিভিন্ন মহল যেভাবে সক্রিয় সচেষ্ট সেভাবে পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি সর্ব মহলে এক প্রকার উপেক্ষিত।
প্রতিদিনের সংবাদ মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি পত্রিকার একটি সংবাদ প্রচার মানে জনসাধারণের মধ্যে সে বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা সংবাদটি পড়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্য এবং করণীয় সম্পর্কে এক প্রকার উদাসীনতাই প্রকাশ করি। বাড়িতে পুকুর ডোবা জলাশয় খাই খন্দকে এবং পর্যটন এলাকায় সাগর নদী হ্রদ আবার কোন কোন সময় পুকুর বা নদীতে গোসল করতে গিয়ে কিশোর যুবক যুবতী পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। পানিতে পড়ে যাওয়া বা তলিয়ে যাওয়া শিশু কিশোরদের উদ্ধার করতে গিয়ে উদ্ধারকারীরও সলিল সমাধির পরিণতি খুবই বেদনাদায়ক। প্রতিদিনের পত্র পত্রিকায় একই পরিবারের একাধিক শিশু বা চাচাতো জেটাতো ভাই বোনের একসাথে মৃত্যুর মর্মান্তিক সংবাদ পাঠকদের মর্মাহত করে। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে প্রাকৃতিকভাবে প্রদত্ত ও মনুষ্য সৃষ্টি সকল উপাদান উপকরণ মানুষের কল্যাণে যেমন প্রয়োজন আবার এসব উপকরণ ক্ষেত্র বিশেষে মানুষের সমূহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ একটু সচেতন ও দায়িত্বশীল হলে বিপদ এড়ানো সম্ভব। বিশ্বে যত জাতি আছে তন্মধ্যে সম্ভবত একমাত্র বাঙালিই একটি জাতি যে নিজের ভালো মন্দের ব্যাপারে খুবই উদাসীন তা ব্যক্তিগত সামাজিক প্রশাসনিক রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শহর বন্দর নগরে পানি নিষ্কাশনে নালা নর্দমা করা হয়। অধিকাংশ নালা থাকে অনিরাপদ ঝুঁকিপূর্ণ ম্যালহোল উন্মুক্ত ঢাকনা বিহীন। যারা এসব নির্মাণ করে তারা দেশের সরকারের দায়িত্বশীল একটি অংশ বা বিভাগ তাদের কাজে ভুল থাকবে ভুল হবে এমন আশা কেউ করে না। দেখা যায় নিরাপত্তামূলক বেষ্টনিহীন নালা বা ঢাকনা বিহীন ম্যানহোলে পড়ে মানুষ ভেসে যাওয়ার ঘটনা অনেক। এভাবে কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চেতনা আসে। এর আগে তাদের মস্তিস্কে ঝুঁকির ধারণাটা আসে না কারো মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের আক্কেল বা হুঁশ ফিরে আসে। এভাবে প্রতিটা কাজে আমাদের অবহেলা বা গাফিলতি লক্ষণীয়। গ্রাম প্রধান দেশ বাংলাদেশ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পুকুর খাই ডোবা খন্দক রয়েছে প্রয়োজনে এসব থাকবে থাকাটা দূষণীয় নয়। কিন্তু যারা এসব বাস্তুবিষয়ের উপর নির্ভরশীল তাদের সন্তান সন্ততি যে কোন মুহূর্তে অসাবধানতাবশতঃ এসব পুকুর ডোবা খাই খন্দকে পড়ে মৃত্যু হতে পারে এ ব্যাপারে বিন্দু পরিমাণ কারো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। প্রতিটি বাড়ির পানির আধারগুলো অরক্ষিত দেখলে সহজে এর সত্যতা বুঝতে কষ্ট হবে না। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে পুকুর যেমন খনন করি সে পুকুরে আমাদের শিশুরা পড়ে মৃত্যু হতে পারে এটা সবাই জানি কিন্তু সন্তানের জীবন রক্ষার্থে পুকুরটি নিরাপদ বা বিপদমুক্ত করতে তেমন অর্থ শ্রম বা শক্তির প্রয়োজন নেই একটু সচেতন হলেই যথেষ্ট। একক বা যৌথ মালিকানার পুকুর হোক সব একই ভাবে অনিরাপদ। শিক্ষিত অশিক্ষিত সকল শ্রেণির মধ্যে দারুণ অভাব লক্ষ্য করা যায় সচেতনতার। একই মানসিকতা থেকে মুক্ত নয় স্থানীয় প্রশাসনও। ব্যক্তি পর্যায়ে যখন মানুষ সচেতন নয় গ্রামের অরক্ষিত পুকুর জলাধার জলাশয়গুলো সুরক্ষিত ও নিরাপদ করতে ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা পরিষদ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে কিন্তু তারা ও একই রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যুর খবর প্রচার প্রকাশিত হলেও দেশের কোন প্রশাসন স্ব স্ব এলাকায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ কল্পে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি বা স্থানীয় জলাধারগুলো নিরাপত্তা বিষয়ক কোন কর্মসূচি কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ জনগণের দোড়গোড়ায় অবস্থিত নারী ও শিশু স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দফতর রয়েছে এসব প্রশাসনে পানিতে পড়ে শিশু মৃত্যুর ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রহস্যজনক। এসব প্রতিবন্ধী দপ্তরে সঠিক চিকিৎসা জরুরি বলে সচেতন মহলের অভিমত। দেশে নারী ও শিশু অধিকার শিশুর জীবন সুরক্ষা বিষয়ক দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে কাজ করছে অথচ দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো মহলের কর্মতৎপরতা নেই। সাগর সৈকত খ্যাত কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কাপ্তাই হদ্র, রাঙামাটি, বান্দরবান, সাঙ্গু নদী পর্যটন এলাকা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন সপরিবারে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন কর্মজীবী প্রতিষ্ঠানের নানা বয়সী শিশু কিশোর যুবক যুবতী ভ্রমণে আসে। দলবদ্ধভাবে বা কেউ একাকী সাগর নদী হ্রদে সাঁতার কাটতে বা গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে যায় এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রায়শ ঘটতে দেখা যায় এতে দেশের অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিভাবানদের অকালমৃত্যু জাতিকে ব্যথিত করে। যারা নিতান্ত আনন্দচ্ছলে সাগরে নদী বা হদ্রে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যায় তারা অধিকাংশই সাঁতারে অনভিজ্ঞ। যারা সাঁতার জানে না তারা যেনে শুনে কেন জীবনের ঝুঁকি নেয় সেটা বোধগম্য নয়। সৈকতে সাগরে জোয়ার ভাটার সময় সূচি এবং সাগরে সাঁতার কাটার বা গোসল করার নিরাপত্তামূলক সর্তকতা নির্দেশনা থাকার পরও অনেকে এসব নির্দেশনা অমান্য করে সাগরে নেমে বিপদের সম্মুখীন হয়। নদীমাতৃক ষড়ঋতুর দেশ এ দেশের নারী–পুরুষ সকলের সাঁতার জানা অতি প্রয়োজন প্রত্যেক মাতাপিতার কর্তব্য নিজ নিজ সন্তানদের চার বছর বয়স থেকে সাঁতার শেখানো। গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন প্রতিটি পুকুর জলাধার যেখানে শিশুরা চলাফেরা খেলা ধূলা করে সেসব পুকুর শিশু সুরক্ষামূলক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা প্রত্যেকের কর্তব্য। এক সময় পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ দাদা–দাদী শিশুদের তদারকি করত যার পরিপ্রেক্ষিতে মাতা পিতা খাম খেয়ালিপনা করলেও শিশুরা থাকত ঝুঁকিমুক্ত। বর্তমানে আত্নকেন্দ্রিক মানসিকতার ফলে একক পরিবারে শিশুর দেখভাল করার একমাত্র দায়িত্ব মাতাপিতার উপরই বর্তায় সাংসারিক নানা কাজকর্মে ও মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুর প্রতি নজরদারি ও যত্নবান হওয়া সম্ভব হয় না বলে অসতর্কতা বশত পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে অনেকে ঈদ উদযাপনে গ্রামের বাড়ি যাবে পরিবারের শিশুরা পুকুর ডোবা জলাশয়ে খেলতে উৎসাহী তাদের প্রতি অধিক সতর্কতা অবলম্বন একান্ত প্রয়োজন। বেদ সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা নদীতে নৌকার উপর তাদের শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা নেই বললে চলে সচেতনতার এমন দৃষ্টান্ত পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার রোধে ভূমিকা রাখতে যথেষ্ট বলে মনে করি।