সাড়ে তিন বছরের আবির ও আদিল দুই জমজ ভাই। বাবা–মার কোল আলো করে তারা দুনিয়াতে এলো একসাথে, আবার তাদের নিঃস্ব করে চলেও গেল এক সাথে। গতকাল শনিবার দুপুরে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হরিদারঘোনা পল্লানের পাড়ায় পুকুরে ডুবে মারা যায় এ দুই ভাই। অন্যদিকে শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মধ্যম ভূমিরখীল গ্রামে বাড়ির পাশের একটি ডোবায় পড়ে মারা যায় আনাস (৭) ও আরফাত (৫) নামে দুই চাচাতো ভাই।
লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের হরিদারঘোনা পল্লানের পাড়ায় পুকুরে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশু হল স্থানীয় আজিজুল হকের পুত্র সাড়ে তিন বছর বয়সী আবির হোসেন ও আদিল হোসেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জমজ শিশু আবির ও আদিলের মা পারভিন আক্তার অসুস্থতার কারণে ঘরের বিছানায় শয্যাশায়ী। শিশুরা মায়ের অগোচরে আম কুড়াতে ঘর থেকে বের হয়। খেলার এক পর্যায়ে তারা বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ তাদেরকে দেখতে না পেয়ে চারপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বজনরা। এক পর্যায়ে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে দ্রুত উদ্ধার করে তাদেরকে উপজেলা সদরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুদের মামা মো. ফারুক জানান, তার বোনের জমজ এই দুই ছেলে ছিল। আর কোনো সন্তান নেই। তারা দুনিয়ায় এলো একসাথে, চলেও গেল একসাথে। শিশুদের দেখাশোনা করতেন তাদের দাদা। গত এক সপ্তাহ আগে তিনিও মারা গেছেন। বাবা হারানোর শোকের মাঝেই ভগ্নিপতি আজিজুল হক দুই সন্তানকে হারালেন।
লোহাগাড়া থানার এসআই জাহেদ হোসেন জানান, পুকুরের পানিতে ডুবে জমজ শিশুর মৃত্যুর ব্যাপারে থানায় কেউ অবগত করেন নাই।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় মাটি ভরাটের জন্য খনন করা ডোবায় পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মধ্যম ভূমিরখীল গ্রামে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। মৃত দুই শিশু হলো– একই গ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে মোহাম্মদ আনাস (৭) এবং মো. ফোরকানের ছেলে ইয়াছিন আরফাত (৫)। নিহত শিশু দুটি সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দিদারুল আলম জানান, তারা ভূমিরখীল রাইজিং স্কুলের পূর্ব পাশে সাবের সওদাগরের নতুন বাড়ির বাসিন্দা। এদিন দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে তারা নিখোঁজ হয়েছিল। এরপর তাদের সম্ভাব্য অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে বাড়ির পাশের একটি ডোবা থেকে তাদের নিথর দেহ উদ্ধার হয়। তিনি বলেন, ডোবাটি বাড়ির মাটি ভরাটের জন্য খনন করা হয়েছিল। তার পাশেই একটি আম গাছ রয়েছে। পরিত্যক্ত ডোবাটি শুকনো অবস্থায় ছিল, তবে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানিভর্তি হয়ে সমতলের সাথে একাকার হয়ে গেছে। শিশু দুটি দুর্ঘটনাবশত সেখানে পড়েই প্রাণ হারিয়েছে। সম্ভবত আম পাড়ার চেষ্টা করেছিল তারা। তাদের একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালেও নেওয়া হয়েছিল। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।