পানছড়িতে আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে কালভার্টের রড চুরির অভিযোগ

অডিও ফাঁস

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ মে, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে কালভার্টের রড চুরির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক উত্তম দেবের বিরুদ্ধে। ফাঁস হওয়া ৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে আসে। ফাঁস হওয়া অডিওতে পানছড়ি উপজেলার ঠিকাদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উত্তম দেব, পানছড়ি সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল জব্বার মেম্বার এবং অটোরিকশা চালক নাজমুল হোসেনের কথোপকথন শোনা গেছে। অডিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, রড চুরির ঘটনায় উত্তম দেবের নাম না বলে অন্য এক ব্যক্তির নাম বলার জন্য অনুরোধ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার মেম্বার। আব্দুল জব্বার মেম্বার অটো চালক নাজমুলকে বলেন, রড চুরির ঘটনায় যে উত্তম জড়িত সেটা প্রকাশ করা যাবে না। বলতে হবে এই রড আমি জয়নাথ দেবের কাছ থেকে কিনেছি। তোর জন্য যদি ২০ লাখ টাকাও খরচ করা লাগে সেটা আমি জব্বার মেম্বার খরচ করমু। তুই কোনো চিন্তা করবি না। তুই এরেস্ট হবি না। তোর জন্য যা যা করা লাগবে আমি আর উত্তমদা করব। তোরে যদি পুলিশ ধরেও একটা টোকাও দিতে পারবে না।

উত্তম দেবও জব্বারের মোবাইল ফোন থেকে নাজমুলের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, তুই কোনো টেনশন করিস না। তোর মোবাইলটা সুইচ বন্ধ করে রাখ। তুই আমার সাথে কথা বলিস না, সমস্যা আছে। তুই কোনো চিন্তা করিস না। তোর মোবাইলের সিমটিম খুলে মোবাইল বন্ধ করে আরেক জায়গায় চলে যা। তোর জন্য যা যা করা দরকার আমরা সব করমু। তুই হানিফ মিয়ার সাথে কথা বলিস। এ বিষয়ে কথা বলতে উত্তম কুমার দেবের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তিনি এ ঘটনায় ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে উল্লেখ করেন, আমার কণ্ঠ সুপার এডিট করে যারা সম্মানহানি করেছে, অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করব।

অডিও ফাঁসকে ‘ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ইউপি সদস্য আব্দুল জব্বার।

অটো চালক নাজমুল হোসেন বলেন, স্থানীয় এমরান আমাকে উত্তম বাবুর বাসা থেকে রডগুলো তার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। এমরানের বাড়ির সামনে উঁচু পাহাড় থাকার কারণে অটোরিকশা নিয়ে পাহাড়ে উঠতে না পারায় তিনি (এমরান) এসব রড আমার বাড়িতে এনে রাখতে বলেন। পরে জানতে পারি এগুলো কালভার্ট ভেঙে চুরি করা রড। ডিবি আমার বাসা থেকে রড উদ্ধার করে। আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। তারা আমাকে উত্তম বাবুর নাম না বলে জয়নাথ বাবুর নাম বলার জন্য নির্দেশ দেন।

রড চুরির ঘটনায় দায়েকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক সামসুজ্জামান বলেন, নাজমুল নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে আমরা ৭৫৫ কেজি রড উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় নাজমুলকে আসামি করে এবং অজ্ঞাত আরো আসামি করে মামলা করা হয়েছে। রড উদ্ধারের পর থেকে নাজমুল পলাতক রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের মাধ্যমে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছি। রড চুরির ঘটনায় যে জড়িত থাকুক না কেন তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনব। ২৪ মার্চ ‘আস্ত সেতু ভেঙে রড চুরি’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় ২০১৬১৭ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৪টি কালভার্ট দিনেদুপুরে ভেঙে রড নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনার পরপর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি টিম তা সরজমিনে তদন্ত করে। এরপর পানছড়ি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আব্দুস সালাম বাদী হয়ে থানায় জিডি করেন। রড চুরির ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করতে ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির ৮ শিক্ষার্থী পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক
পরবর্তী নিবন্ধখার্তুম থেকে পোর্ট সুদানের পথে ৬৮২ বাংলাদেশি