পানগাঁও টার্মিনাল গতি পেল না ৮ বছরেও

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৭ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের উপর চাপ কমানো, আমদানি রপ্তানিকারকদের খরচ সাশ্রয় এবং চট্টগ্রাম বন্দরে ঢাকামুখী কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে গতিশীলতা আনতে গড়ে তোলা বহুল প্রত্যাশার পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল ৮ বছরেও গতি পেলো না। বিভিন্ন সময় দফায় দফায় উদ্যোগ এবং নানাভাবে আর্থিক ক্ষতি শিকার করেও এই টার্মিনালটিকে খুব বেশি কাজে পৌঁছানো যাচ্ছে না। টার্মিনালের বিস্তৃত এলাকা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রপাতি। স্বপ্নের পানগাঁও টার্মিনাল বন্দর কর্তৃপক্ষের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন রুটে কন্টেনার পরিবহনের বৈপ্লবিক একটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেই ২০১৩ সালে প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনাল। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএর মালিকানাধীন ৫৫ একর জায়গার উপর এই কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ঢাকামুখী কন্টেনারের চাপ কমানো, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের গাড়ির চাপ কমানো, রাস্তার স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি, ঢাকা অঞ্চলের আমদানি রপ্তানিকারকদের খরচ সাশ্রয়সহ বিভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে টার্মিনালটি গড়ে তোলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এই টার্মিনালে নিয়মিত কন্টেনার আনা নেয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত ঢাকা অঞ্চলের যেসব কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে সেগুলো ছোট আকৃতির জাহাজে বোঝাই করে পানগাঁও টার্মিনালে নিয়ে যাওয়া হবে। অপরদিকে ঢাকা অঞ্চলের রপ্তানিপণ্য বোঝাই কন্টেনারগুলো পানগাঁও থেকে ফিরতি জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। এখান থেকেই ফিডার ভ্যাসেলে ওই কন্টেনার ট্রান্সশিপমেন্টে পোর্টে চলে যাবে। এতে ঢাকা অঞ্চলের কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে আনা নেওয়ার বিদ্যমান ব্যবস্থায় মহাসড়ক এবং রেলওয়ের উপর যে চাপ পড়ে তা কমে যাবে। একই সাথে ব্যবসায়ীদের খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও গত ৮ বছরেও পানগাঁও টার্মিনালে কোনো গতি আসেনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেরা ছোট আকৃতির কন্টেনার জাহাজ কিনে এই রুট জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পানগাঁও টার্মিনালে কন্টেনার বুকিংয়ের ক্ষেত্রে মেইন লাইন অপারেটরেরা (এমএলও) অত্যধিক ভাড়া আদায় করার ফলে এই টার্মিনাল ব্যবহার করা কঠিন হয়ে উঠেছে। পণ্য পরিবহনে দীর্ঘসময় এবং অতিরিক্ত খরচের কারণেই মূলতঃ টার্মিনালটি অকার্যকর হয়ে রয়েছে। রেলের চেয়ে জাহাজ ভাড়া বেশি হতে পারে না। অথচ এই টার্মিনালে কন্টেনার পরিবহন করতে রেলের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। একই সাথে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কন্টেনার ধারণক্ষমতার পানগাঁও টার্মিনালের ৫৫ হাজার বর্গমিটারের সুবিশাল ইয়ার্ডের প্রায় পুরোটাই ফাঁকা পড়ে থাকে। যন্ত্রপাতির ব্যবহার নেই। দামি দামি সব যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পুরো বছরে বিশ হাজারের মতো কন্টেনার এই টার্মিনালে হ্যান্ডলিং হয়। অথচ বছরে অন্তত লাখ পাঁচেক কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের বিশাল স্বপ্ন নিয়ে এই টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনালের গতি আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেনার পরিবহনের ভাড়া অনেক কমিয়েছে। কিন্তু এমন কিছু খরচ আছে যেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই। বিশেষ করে শিপিং এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার, সিএন্ডএফ এজেন্ট সহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার এসব ট্যারিফ নির্ধারণ এবং আদায় করে। এসব খাতের খরচগুলো সমন্বয় করে একটি ট্যারিফ নির্ধারণ করা গেলে টার্মিনালটি গতি পেতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ব্যবহারকারীরা বলছেন, পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনালের গতি ফেরাতে হলে ভাড়া কমাতে হবে। প্রতিদিন জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। এখন একদিন জাহাজ গেলে এক সপ্তাহেও অপর জাহাজ যায় না। ফলে কন্টেনার পরিবহনে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। সব স্টেকহোল্ডারের সমন্বিত উদ্যোগই পানগাঁও কন্টেনার টার্মিনালকে গতিশীল করতে পারে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকবাজার ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন আজ
পরবর্তী নিবন্ধনয় দিনেও হদিস নেই রাউজানের নিখোঁজ দুই বোনের