ফুটবল কিংবা ক্রিকেট। ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক। ছোট কিংবা বড় আসর। পাতানো খেলা সবখানেই চলে। হয়তো ভবিষ্যতেও চলবে। তবে পাতানো খেলার ধরন নিয়ে প্রশ্ন জাগে। কোনটা ধরা পড়ে খেলার ধরনে আবার কোনটি অতি সূক্ষ্মভাবে করা হয় যাতে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগের সুপার থ্রি পর্বের শেষ ম্যাচে সাউথ এন্ড ক্লাব এবং শোভনীয়া ক্লাবের মধ্যকার ম্যাচটি পাতানো ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে সব মহল থেকে। এই দুই দলের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ম্যাচটি পাতানো বলে দাবি উঠছে তা কিন্তু নয়। খোদ এই লিগের যারা আয়োজক সেই চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন এবং চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষ প্রায় এক ডজন কর্মকর্তা যারা মাঠে বসে খেলাটি দেখেছে তারা একযোগে রায় দিয়েছে ম্যাচটি পাতানো ছিল। শুধু পাতানো নয় তাদের ভাষায় ম্যাচটি ছিল জঘন্য পাতানো। আর সে পাতানো ম্যাচের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা সভায় বসেছিলেন। বৈঠকের ফলাফল মিলেছে শূণ্য।
কথায় আছে “যত গর্জে তত বর্ষে না”। এই বৈঠকটির বেলায়ও যেন তাই হলো। লিগের ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত না থাকায় কোন রকমের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে সভা। তার মানে বাইলজ অনুযায়ী সুপার থ্রি পর্বের তিন দলকে আবার খেলতে হবে পর্বটি। আর তাতেই পাতানো খেলা খেলে যারা লিগটাকে কলংকিত করল তাদেরই জয় হয়েছে বলে মনে করছেন সভায় উপস্থিত বেশিরভাগ কর্মকর্তা। যেকোন খেলার ব্যাপারে ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় ৭২ ঘন্টার মধ্যে। গতকাল যখন সিডিএফএ এবং সিজেকেএস কর্মকর্তারা যৌথ সভায় বসেছিলেন তখনো তিন ঘন্টারও বেশি সময় বাকি ছিল ৭২ ঘন্টা পার হওয়ার। কিন্তু ডিসিপ্লিনারি কমিটির রিপোর্ট এবং সিদ্ধান্ত যে জমা দিতে হয় সেটা বেমালুম ভুলে গেলেন ডিএফএ কর্মকর্তারা। আর সেখানেই প্রশ্ন জেগেছে সত্যিই কি তারা ভুলে গেছেন নাকি তারা অপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন ভুলের ভান করে ?
সভায় ডিএফএর সাধারন সম্পাদক নাকি বলেছেন তার ভুলেই ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভা হয়নি। এখন প্রশ্ন জাগছে যিনি এতকাল ধরে ফুটবলের সাথে জড়িয়ে আছেন, সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদ চালাচ্ছেন তিনি কিভাবে ভুলে যান এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়। নাকি তাকে বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে ? তেমন প্রশ্নও উঠছে। আবার সভায় উপস্থিত অনেকেই বলছেন ডিএফএ কিংবা সিজেকেএস কেউই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকিটা নিতে চায়নি। কারন পাতানো ম্যাচ খেলার অভিযোগ যাদের বিপক্ষে তারা সিজেকেএস সাধারন সম্পাদকের খুব কাছের মানুষ। তাই হয়তো তার মুখ দিয়েই সিদ্ধান্তটা বের করতে চেয়েছিলেন যাতে নিজেদের কাঁধে কোন ঝামেলা না চাপে। কিন্তু নিজেরাই নিজেদের অজানা ফাঁদে আটকে গেলেন শেষ পর্যন্ত। গতকালের সভার সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। বাইলজের কারনে হয়তো ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত নিতে হয় আগে। তারপর সেটা নির্বাহি কমিটির সভায় অনুমোদন কিংবা প্রত্যাখ্যানের প্রশ্ন আসে। কিন্তু প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই এই কারনে যে, যে ম্যাচটি নিয়ে প্রশ্ন জাগছে সে ম্যাচটি মাঠে বসে প্রত্যক্ষ করেছেন জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রায় একডজন কর্মকর্তা। তারা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন ম্যাচটি পাতানো হয়েছে। তাহলে এই সব শীর্ষ কর্মকর্তার কথার কোন দাম নেই। তাদের সবার কথা কি তাহলে মিথ্যা ? তেমন প্রশ্ন করেছেন ডিএফএর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা। তারা এমন প্রশ্নও তুলেছেন প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে একটি দলকে কোন রকম রিপোর্ট ছাড়াই যদি এক বাক্যে সাসপেন্ড করা যায় তাহলে এতগুলো শীর্ষ কর্মকর্তার জবানবন্দীর কারনেও কি এই ম্যাচটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতোনা? সেখানে আবার ডিসিপ্লিনারি কমিটি থেকে শুরু এত রিপোর্টের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন? খোদ সভাতেই নাকি প্রশ্ন তুলেছেন কোন কোন কর্মকর্তা, নিজেরা যদি স্বাধীনভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে পদে বসে থেকে লাভ কি? সে সাথে আরো বড় প্রশ্ন উঠেছে তৃতীয় বিভাগের মত ফুটবল আসরে যদি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তাহলে প্রিমিয়ার কিংবা প্রথম বিভাগের মত আসরে তারা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন? এমনিতেই চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া কিংবা পুরস্কৃত হওয়ার নজির ভুরি ভুরি। এবারের ঘটনায় সে নজিরের খাতায় আরো একটি পাতা যোগ হলো। যার মাধ্যমে হয়তো অপরাধীরা আরো উৎসাহিত হবে অপরাধ সংঘটিত করতে। কারণ তারা বুঝে গেছে অপরাধ করেও দু’এক জয়গায় নক করলে ঠিকই পার পাওয়া যাবে। তাহলে অপরাধ করতে আর সমস্যা কোথায়।