পাঠক প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে

| শুক্রবার , ১১ মার্চ, ২০২২ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর সমাপনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে গতকাল। আমরা দেখেছি বাংলা একাডেমির বইমেলার পাশাপাশি এই মেলায়ও ছিল শত প্রাণের উদ্দীপ্ত উপস্থিতি আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-এর এই মেলা লেখক- পাঠকের মিলনমেলা। বইকে কেন্দ্র করে প্রাণের এই স্পন্দন আমাদের জাতীয় জীবনে প্রেরণার উৎস। বিশিষ্টজনের মতে, ভাষাশহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবারও লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। চেতনায় একুশকে ধারণ করে বাঙালির এই মিলনমেলায় প্রতি বছর নতুন নতুন পাঠক, প্রকাশক ও লেখক যুক্ত হচ্ছেন। এ যেন এক ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি। বইকেন্দ্রিক সংস্কৃতি। করোনার ভয়াবহ থাবা ২০২১ সালের এই সংস্কৃতিকে দমিত করেছিল বটে, তবে জমে উঠেছে এই প্রাণের মেলা। বইমেলার আরেকটি আকর্ষণ হলো লেখকের উপস্থিতি, যা অন্যবারের মতো এবারের মেলাকেও সমৃদ্ধ করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন বয়সী পাঠকের সমাগম মেলায় প্রাণের সঞ্চার করেছে।
প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তাঁর এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রকাশনাশিল্প অনেক দূর এগিয়েছে। একটু যত্নবান হলেই এর সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা সম্ভব। তবে বইয়ের সংখ্যার চাইতে এর মানের দিকে নজর দেওয়া একজন লেখকের যেমনি প্রয়োজন তেমনি প্রকাশকেরও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
প্রকাশনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে গত শতকের নব্বই দশক থেকে এ শিল্পের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বদলে দিয়েছে তার ধ্যান-ধারণা, পরিবর্তন হয়েছে তার পরিবেশ। প্রকাশনার ক্ষেত্রে পেছনের অনেক কাজ কমে গেছে, সময় কম লাগছে। খুব অল্প সময়েই বাজারজাত করা যাচ্ছে উৎপাদিত বই। এতে প্রচুর বই বাজারে আসতে পারছে। প্রকাশনায় এসেছে সৌন্দর্য, বেড়েছে জৌলুশ। অস্বীকার করার উপায় নেই যে মানও বেড়েছে। প্রকাশনার সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকাশকের সংখ্যাও বেড়েছে। অনেক শিক্ষিত তরুণ আগ্রহী হচ্ছেন এ পেশায়। স্বাধীনতার পর নানা সঙ্কট পেরিয়ে প্রকাশনা শিল্প আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ শিল্প বাংলাদেশে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। কিন্তু সেই তুলনায় সাহিত্যের অবস্থান কতটা শক্তিশালী হয়েছে, সেটা ভাববার বিষয়। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের কারণে একটা বই যত তাড়াতাড়ি প্রকাশ সম্ভব, তাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েও আমাদের প্রশ্ন জাগে, প্রকাশিত বইগুলো কতটা সম্পাদিত হয়ে বের হয়? বড়দের প্রকাশনার কথা বাদ দিলাম, কিন্তু ছোটোদের বই? কতটা মানসম্পন্ন আমাদের ছোটোদের প্রকাশনা?
যদিও আমাদের দেশে মান শব্দটা অনেকটাই আপেক্ষিক। মূলত সকল ক্ষেত্রে মান বজায় রাখার ঘাটতিই পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে মান বজায় রাখা বিষয়ে উপেক্ষা করাও চলে না। তেমনি একটা ক্ষেত্র হলো বই। একটি ভালো বই হচ্ছে সঠিক পথ চলার বন্ধু। ভালো বই পথ-প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। যেহেতু ভালো বই পাঠককে আনন্দ দেয়, দেয় প্রশান্তি, সেহেতু আমাদের চাই মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশ। বইয়ের আবেদন যেহেতু শাশ্বত, সেহেতু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের নজরদারি অত্যাবশ্যক। নিম্নমানের বই এবং বানান ভুলসহ বিভিন্ন প্রকার অসঙ্গতি সকলের- বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তাই মানসম্পন্ন বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের পেশাদার সম্পাদকের শরণাপন্ন হওয়া কর্তব্য।
অমর একুশের চেতনায় লালিত এই বইমেলা আজ বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি।
লেখক-পাঠক-প্রকাশকের ত্রিবেণী বন্ধন এই মেলাকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। পারস্পরিক ভাবনা বিনিময়, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে আলোচনা সংশ্লিষ্টদের ঋদ্ধ করে। শিশুদের মনোজগতে এ বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় নতুন নতুন বই দেখে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে একটি নতুন প্রজন্ম। তাদের মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে একটি পাঠক প্রজন্ম।
বাংলা একাডেমি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বইমুখী সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
পাঠাভ্যাস তৈরিতে তাদের কর্মকাণ্ড প্রশংসনীয় ও অভিনন্দনযোগ্য। বইয়ের প্রচার প্রসারে তাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে- সেই প্রত্যাশা আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে