পাঠকের যত আগ্রহ নতুন উপন্যাসে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

১৭০ বছর আগে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। হেনা ক্যাথরিন ম্যুলেন্স এর লেখা ‘ফুলমণি ও করুণার বিবরণ’ (১৮৫২) নামের এ উপন্যাসকে অবশ্য অনেকে প্রথম উপন্যাস বলতে নারাজ। তারা ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত প্যারিচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ কে বাংলা ভাষার প্রথম উপন্যাস বলে থাকেন। তবে এ দুটোর কোনোটিই সত্যিকারের উপন্যাস হয়ে উঠেনি। পরবর্তীতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্যের শাখাটি। পূর্বসূরিদের দেখানো এ পথে হাঁটছেন সমকালের লেখকরাও। তারাও লিখছেন মানুষের মহাকাব্য খ্যাত উপন্যাস। নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ল জিমনেশিয়াম মাঠে চলছে বইমেলা। মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্যের নানা শাখার অসংখ্য গ্রন্থ। এর মধ্যে বড় একটি সংখ্যা দখল করে আছে উপন্যাস। পাঠকের তীব্র আকর্ষণ আছে বলেই উপন্যাস প্রকাশের ঝুঁকি নিয়েছেন প্রকাশকরাও। ঝুঁকি নিয়ে তারা ভুলও করেননি। কারণ মেলায় আগতরা খুঁজছেন উপন্যাস। কিনছেনও।
এবার প্রথমা প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে বেশ কয়েকটি উপন্যাস। এর মধ্যে আনিসুল হকের ‘রক্তে আঁকা ভোর’ এবং বিশ্বজিৎ চৌধুরীর ‘খুন ও আনন্দকুসুম’ নিয়ে পাঠকের আগ্রহ চোখে পড়ার মত। থ্রিলারের মতো টান টান উত্তেজনাকর কাহিনীর মধ্যে নিজের অজান্তেই ঢুকে পড়বে ‘খুন ও আনন্দকুসুম’র পাঠকগণ। কিন্তু পাঠ শেষে মনে হবে এ আমাদের জীবন ও সমাজের গল্প। প্রতিদিন চারপাশে ঘটছে, সংবাদপত্রের পাতায় উঠে আসছে এরকমই অনেক ঘটনা।চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে মদিনা জাহান রিমির ‘পেনাল্টি’সহ কয়েকটি উপন্যাস। এ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত শুকলাল দাশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিশোর উপন্যাস ‘তুহিনের স্বাধীন দেশ’ নিয়ে পাঠকের তীব্র আগ্রহ দেখা গেছে। গতকাল বিকেলে দেখা গেছে, লাইন ধরে পাঠক কিনছেন কিশোর উপন্যাসটি। এ সময় স্টলে উপস্থিত লেখকের অটোগ্রাফ নিচ্ছিলেন তারা। ‘তুহিনের স্বাধীন দেশ’ এর ফ্ল্যাপে লেখা রয়েছে- ‘রাত তিনটে বাজতেই শোনা গেল শিসের শব্দ, মনে হলো যেন পাখির ডাক। তুহিন, সানি ও জয় তিন দিক থেকেই গ্রেনেডের পিন খুলে খোলা জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মারল। একসঙ্গে সবকটা গ্রেনেড বিস্ফোরিত হল। ভেতর থেকে চিৎকার করে পাক সেনারা বেরিয়ে আসতে থাকল। মুক্তিযোদ্ধাদের রাইফেল ও গ্রেনেড রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে বারুদের গন্ধে চারদিকের বাতাস ভরিয়ে তুলল। খান সেনারাও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে প্রতিরোধ গড়তে চাইল, কিন্তু বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারল না। তিনজনের মৃতদেহ ফেলে রেখে রাতের অন্ধকারে দিশেহারার মতো ক্যাম্প ছেড়ে স্পিডবোটে করে বোয়ালখালীর দিকে পালাল। কমান্ডার সবুজ ভাইয়ের নির্দেশে সবাই তুহিনকে খুঁজতে শুরু করল। একটু দূরে ঝোঁপের কাছে তাকে পাওয়া গেল। শরীরে মেশিনগানের গুলি লেগেছে। কমান্ডার সবুজ এক মুহূর্তও দেরি না করে তুহিনকে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ক্যাম্পে চলে এলেন। তুহিন অস্ফুট স্বরে বলল, সবুজ ভাই, আমি কি মরে যাবো? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমি যদি মরে যাই তবে মাকে বলবেন, আমি দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছি, আমি মৃত্যুকে ভয় পাইনি।’
এছাড়া বাতিঘর প্রকাশন থেকে প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে হরিশংকর জলদাশের ‘জলপুত্র’ ও তাহমিনা শাম্মীর ‘দীপান্তর’ উল্লেখযোগ্য। আবির প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে সাইফুল ইসলাম খোকনের ‘স্বপ্ন ঘিরেই শুধু তুমি’। কথাপ্রকাশ থেকে বেরিয়েছে হরিশংকর জলদাশের ‘দুর্যোধন’, আন্দালিব রাশদীর ‘খুকি’।
এ সময়ের পাঠকপ্রিয় লেখকের একজন সাদাত হোসাইন। এ বছর কালি ও কলম তরুণ লেখক পুরস্কার পেতে যাওয়া এ কথাসাহিত্যিক ঢাকা থেকে গতকাল আসেন চট্টগ্রাম বইমেলায়। তার ‘প্রিয়তম অসুখ সে’ উপন্যাস ইতোমধ্যেই পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের বইমেলার পার্থক্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঠামোগত পার্থক্য আছে। বাকি সব একই রকম মনে হচ্ছে। ঢাকার মতো এখানেও বইয়ের সমারোহ এবং পাঠকের আনাগোনা আছে। ঢাকায় তো দেশের নানা জায়গা থেকে মানুষ আসেন। ওই জায়গা থেকে আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, স্থানীয় হিসেবে চট্টগ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি বই পড়েন। এখানকার মানুষ দারুণ সংস্কৃতিমনা, সৃষ্টিশীলতার প্রতি তাদের যে আগ্রহ তা খুব কম জায়গার মানুষের মধ্যে দেখেছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রতি আমার আলাদা সফট কর্নার আছে। যখন থেকে আমার লেখালেখির যাত্রা তখন থেকে চট্টগ্রামের বিশাল একটা অংশ আমার বই পড়ছেন। ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত চট্টগ্রাম আসি। যতবার এসেছি প্রতিবারই পাঠকের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়েছি। গতবছর (২০২১) করোনা পরিস্থিতির জন্য আসা হয়নি। এর আগের বছরের (২০২০) অভিজ্ঞতাটা অসাধারণ স্মৃতিময় ছিল। গত বছর ছন্দপতন হওয়ায় এবার একটা শঙ্কা নিয়ে ছিলাম পুরনো সেই ছন্দ থাকবে কিনা। তবে এসেই মন ভালো হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের পাঠকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা যেন এভাবেই ভালোবাসেন, আগলে রাখেন।
প্রসঙ্গত, নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে তৃতীয়বারের মত চলছে অমর একুশে বইমেলা। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মেলার পঞ্চম দিন। মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছেন। মেলা চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্ব সাধারণের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিবেদন করা হয়েছে এবারের মেলা। মেলায় ৯৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১২০টি স্টল আছে।
আলোচনা সভা : গতকাল মেলামঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘রবীন্দ্র উৎসবে’ প্রধান অতিথি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। আর মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য বাঙালি জাতি ১৯৫২ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের আত্মমর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রফেসর রিত্তা দত্তের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মেলা পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলম, কথাসাহিত্যিক সাহাদাত হোসেন, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী।
প্রফেসর রিতা দত্ত বলেন, রবীন্দ্রনাথ ছাড়া বাংলা সাহিত্য চর্চা পরিপূর্ণতা লাভ করে না। আমাদের দুঃখ-বেদনা, আশা যা কিছু প্রকাশ সব জায়গায় আমরা রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্রিকেট খেলায় হার জিতকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধপিলখানা শাহাদৎ বার্ষিকী আজ