পাঠকের ভালোবাসা ও আস্থায় ৬৩ বছরে দৈনিক আজাদী

| সোমবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

আজ ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২২ দৈনিক আজাদী পদার্পণ করছে প্রতিষ্ঠার ৬৩ বছরে। এটি বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। সবদিক দিয়ে অনিশ্চয়তার এ যুগে একটি পত্রিকার এতোটা কাল সদর্পে এগিয়ে যাওয়া রীতিমত ঈর্ষণীয় ব্যাপার। দৈনিক আজাদীকে বলা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র। কিন্তু তার জন্ম বাংলাদেশের জন্মের ১১ বছর ৩ মাস ১১ দিন আগে, অর্থাৎ ১৯৬০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় লাভের পর ১৭ ডিসেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদী। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘নিরীক্ষা’ সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৯৯ সংখ্যায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী’ শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রেস ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়, কেননা তাঁরা আজাদীকে এই স্বীকৃতিটা দিতে কার্পণ্য করেননি।
আজাদী চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের সংবাদপত্র। সুদীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত চট্টগ্রামের দুঃখ-হাহাকার-সংকট আর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে ধরতে এটি পরিণত হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার মুখপত্রে। চট্টগ্রামের জনমানুষের কথা বলার জন্য- সর্বোপরি বঞ্চিত ও অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্য নিয়ে ৬৩ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক আজাদী। আজাদী আজ শুধু একটি সংবাদপত্রই নয়, এটি এখন চট্টগ্রামের আয়না হিসেবেও স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেব যখন ৬৩ বছর আগে এ ধরনের একটি কাগজের কথা চিন্তা করেছেন তখন আসলে দৈনিক সংবাদপত্র এখানে ছিল এক ধরনের কুটির শিল্পের মতো। ছোট্ট ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগুলো প্রকাশিত হত। সেখানে তিনি যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা কল্পনা করেছেন এটার সূত্র ধরে বলা যায় যে, তিনি এক ধরনের দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন এবং একজন অগ্রনায়কের কাজ করেছেন। পত্রিকাটা যে ৬৩ বছর ধরে টিকে আছে, ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, তাতে একভাবে বলা যায় যে, তার স্বপ্ন সফল হয়েছে। ‘আজাদী’ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মূলত আঞ্চলিক পত্রিকা এবং চট্টগ্রাম যেহেতু বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান নগরী, বন্দরনগরী – ফলে চট্টগ্রামের সারা দেশব্যাপী একটা প্রভাব আছে, ভূমিকা আছে। ‘আজাদী’ চট্টগ্রামের জনগণের মুখপত্র হিসেবে একটা ভূমিকা পালন করেছে। সেদিক থেকে ‘আজাদী’র এই ভূমিকাটা আমার মনে হয় দেশবাসীও স্বীকার করে এবং চট্টগ্রামবাসীও স্বীকার করে। অধ্যাপক আবুল মোমেন তাঁর এক লেখায় বলেছেন, ‘আজাদী’র একটা চরিত্র আছে যেটা সব সময় যেন, সাধারণ মানুষের চেহারা নিয়ে বেরিয়েছে, এটার মধ্যে কোনো জাঁকজমক ছিল না, এটার মধ্যে খুব একটা বহিরঙ্গকে অতি সুদৃশ্য মোড়কে মোলানোর ব্যাপারটা ছিল না। এটা ছিল একটা সাধারণ মানুষ যেন নিজের আপন কাগজ বলে মনে করতে পারে। সেই হিসেবে আমি বলব যে, ‘আজাদী’ তার চরিত্রটা আগাগোড়াই বজায় রেখেছে এবং সেইভাবে তার একটা সীমিত পরিসরের মধ্যে তার ভূমিকাটা সঠিকভাবে পালন করেছে। ইদানীংকালে গত তিন-চার-পাঁচ বছর একটা নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। প্রযুক্তির কারণে এবং বিশ্বব্যাপী যে যোগাযোগ, বিশেষত তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে যে যোগাযোগটা ঘটেছে, তাতে কতখানি আর আঞ্চলিক কাগজ থেকে ভূমিকা পালন করা যাবে, এটার একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে একটা প্রভাব হয় তো দেখা যাচ্ছে।
সংবাদপত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘আজাদী’ শুধুমাত্র একটা পত্রিকা নয়, একটা দর্পণ। সেখানে মানুষ তার অতীত ও বর্তমানকে দেখতে পাই এবং ভবিষ্যতকেও সে দেখতে পারবে। সেই ক্ষেত্রে ‘আজাদী’ অন্তত এই অঞ্চলের মানুষকে এই বিষয়টি ভাবতে শেখায়। ‘আজাদী’ আজ কেবল একটা মিডিয়া নয়, এটা বর্তমানে একটা আন্দোলন। এই আন্দোলন হিসাবেই ‘আজাদী’কে এই অঞ্চলের মানুষকে সংঘটিত করতে হবে যাতে এই অঞ্চল প্রকৃত প্রস্তাবেই শুধু বাংলাদেশের নয়, প্রাচ্যের নয়, সমগ্র পৃথিবীর নান্দনিক জগতের প্রবেশ দ্বারে পরিণত হতে পারে। এই বর্তমান যুগে করণীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মানুষের মনে একটা গুণবাচক ও ইতিবাচক ভাবনা তৈরি করা। এই ক্ষেত্রে ‘আজাদী’র একটা বিশাল ভূমিকা আছে। আর এটিই হোক ‘আজাদী’র অনুপ্রেরণা।
আমরা মনে করি, এ সাফল্য শুধুমাত্র আজাদীর নয়, যাঁরা মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন, পেশাজীবী সাংবাদিক এবং যাঁরা পত্রিকার পাঠক, এ সাফল্য তাঁদের সবার। আজাদীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবার প্রতি থাকলো আমাদের ভালোবাসা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে